হোন্ডা ব্র্যান্ডের গাড়ির আকর্ষণীয় ফিচারগুলো
বিগত ৫০ বছর ধরেই ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে অন্যতম প্রধান সেডান কার প্রস্তুতকারক হিসেবে নিজেদের সুনাম বজায় রেখেছে হোন্ডা ব্র্যান্ডটি। বাংলাদেশের বাজারে গত কয়েক বছরের বিচারে প্যাসেঞ্জার কারগুলোর বিক্রি বেড়েছে। আর ক্রেতাদের আগ্রহ ও ক্রয়ের হারের মান নিরূপণে দেখা যায় টয়োটা, নিসান, হুন্দাই ইত্যাদি ব্র্যান্ডগুলো থেকে হোন্ডা ব্র্যান্ড এর বিক্রি বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। আজ এই আর্টিকেলটিতে তাই আমরা আলোচনা করবো হোন্ডা ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর আকর্ষণীয় ফিচারগুলো নিয়ে যা গাড়ি কেনার সময় ব্র্যান্ড নিয়ে আপনাকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।
উদ্ভাবনী ফিচারগুলোঃ
উদ্ভাবনী ব্র্যান্ড ও আধুনিক গাড়ি প্রস্তুতকারক হিসেবে সাম্প্রতিক দশকে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে হোন্ডা। চলুন জেনে নেয়া যাক হোন্ডা নিজেদের গাড়িতে নতুন যে সব ফিচার যুক্ত করেছেঃ
১) বিল্ট ইন ভ্যাকিউম সিস্টেমঃ
প্রথম ফিচার হিসেবে আমরা আলোচনা করবো স্বয়ংক্রিয় ভ্যাকিউম ক্লিনিং ব্যবস্থা নিয়ে। ২০১৪ সালে হোন্ডা অডেসি গাড়ির মডেলটিতে বিল্ট ইন ভ্যাকিউম ক্লিনিং ব্যবস্থা আনা হয়েছে যা আপনার গাড়িকে রাখবে পরিচ্ছন্ন ও আপনাকে বাঁচাবে যত্রতত্র প্রফেশনাল ক্লিনিং এর খরচের ধাক্কা থেকে। আপনার পরিবারে যদি শিশু থাকে তবে গাড়ি নোংরা হবার সম্ভাবনা বেশি। অবশ্যই এই ফিচারটির কারণে অডেসি মডেলের এই ফ্যামিলি সাইজ এই গাড়িটি মাঝারি কিংবা ছোট পরিবারের সবার পছন্দের তালিকায় সবার উপরে থাকবে।
২) অপেক্ষাকৃত কম ওজনের গাড়িঃ
মিলিটারি গ্রেড অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহারের মাধ্যমে গাড়িগুলো আগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত হালকা ওজনে তৈরি হচ্ছে। হোন্ডা ফিট হ্যাচব্যাক মডেলের গাড়িটিতে এই অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহারের মাধ্যমে গাড়িটির ওজন প্রায় ৫০ কেজি কমানো হয়েছে। হালকা হওয়া স্বত্বেও গাড়িটি মজবুত এবং নিয়ন্ত্রণ করাও সহজ।
৩) জ্বালানী সাশ্রয়ঃ
প্রত্যেক বছরই আমরা বহুজাতিক অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নানা গবেষণার মাধ্যমে গাড়ি বিষয়ে নানা সমস্যার সমাধান নিয়ে আসতে দেখি। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধাণ একটি বিষয় ছিল বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান জ্বালানী খরচ বৃদ্ধি। ২০১৫ এর হোন্ডা ফিট মডেলটিতে পাওয়া যাবে প্রতি গ্যালনে ৩০ মাইলেরও বেশি গাড়ি চালনার সুযোগ যা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আধুনিক সিলিন্ডার ও ইঞ্জিন ব্যবস্থার মাধ্যমে।
৪) গিয়ার বাটনঃ
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন! শুধুমাত্র বোতাম কিংবা বাটন প্রেসের মাধ্যমেই আপনি গাড়ির গিয়ার শিফট করতে পারবেন! অবাক করা এই ফিচারটি যুক্ত হয়েছে ২০১৬ হোন্ডা পাইলট গাড়ির মডেলটিতে। এই ফিচারটি শুধুমাত্র ড্রাইভিং বিষয়টিকে শুধু যে সহজ করেছে তা নয়, এর মাধ্যমে গাড়িতে বেড়েছে স্পেস যা চালককে আরো সহজভাবে গাড়ি চালনায় সাহায্য করছে।
৫) দূর্ঘটনায় স্বয়ংক্রিয় ব্রেকঃ
২০১৫ এর হোন্ডা অ্যাকর্ড এর গাড়িগুলোতে আগে থেকেই দূর্ঘটনার আভাস পেয়ে অঘটন ঘটার আগেই স্বয়ংক্রিয় ব্রেক এর ফিচারটি যুক্ত হয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় ফিচারটি দ্বারা বিপদের আভাস পেলেই আপনার সিট ও স্টিয়ারিং হুইল কাঁপতে শুরু করবে ও আপনি যদি সেই অনুযায়ী কোন ব্যবস্থা না নেন তবে আপনার গাড়িটি নিজে থেকেই স্বয়ংক্রিয় ব্রেক চাপার মাধ্যমে আপনাকে দূর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাবে।
লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দের- হোন্ডা সিভিক
এই আর্টিকেলটির লেখকের প্রথম গাড়িটি ছিল ভিটিইসি ইঞ্জিন যুক্ত ১৯৯৭ হোন্ডা সিভিক এক্স কোপ। দুই দশকের পুরনো সেই গাড়ির তুলনায় ব্র্যান্ড নিউ হোন্ডা সিভিক অতিমাত্রায় আধুনিক ও দারুণ। জ্বালানী সাশ্রয় ও পারফর্মেন্স দুই দুইয়ের মিশেলে দারুণ একটি গাড়ি এই হোন্ডা সিভিক।
বিশেষ কি রয়েছে এই গাড়িটিতেঃ
দুটি শব্দ বলা যাক, ‘টার্বো ইঞ্জিন’!
হোন্ডা তার টার্বো ইঞ্জিন দ্বারা চালককে দিচ্ছে অসাধারন ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা। ৫৫০০ আরপিএম-এ ১৭৪ এইচপিএস ১.৫ লিটার ইঞ্জিন ও ২২০ এনএম টর্ক এর মাধ্যমে হোন্ডা ব্যবহারকারীরা পাচ্ছেন এ অভিজ্ঞতা। আর তাইতো ০-৬০ যেন সেকেন্ডের পলকে আপনি পার হতে পারছেন!
এছাড়া ট্রান্সমিশনকে স্পোর্টস মুডে সুইচ করার মাধ্যমে নিম্ন আরপিএম এ আপনি পাচ্ছেন অধিক পারফর্মেন্স। মজবুত স্টিয়ারিং হুইলস ব্যবহারকারীকে দিচ্ছে গাড়ি চালনায় সেরা স্পিড।
নয়েস কমানোর জন্যে হোন্ডা দিচ্ছে ইঞ্জিন মাউন্টে ফ্লুয়েড ফিল্ড ব্লাশিং ও নিচু সাসপেন্সন পার্টস যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা পাচ্ছে নিঃশব্দে গাড়ি চালনার অভিজ্ঞতা।
লুকঃ
মসৃণ দেখতে এই গাড়িটি পূর্ববর্তী মডেলগুলোর মত পেয়েছে একটি ট্রিমার শেইপ। গাড়ির শেইপটি আপনাকে মনে করিয়ে দেবে জাগুয়ার হুড এমব্লেম এর কথা। গাড়ির পেছনের লাইটটি নজরকাড়া বুমেরাং শেইপ এর। গাড়ির রিমসগুলো সুন্দর ও বড়, তবে অভিজ্ঞদের মতে এটি এর থেকে আরও বড় হতে পারতো। গাড়িটির আকর্ষণীয় রেয়ার স্পয়লার একে দিয়েছে এক উড়ালপঙ্খী রূপ। গাড়ির ড্রাইভিং সিটের স্থানটি চালকের জন্য অনেকটাই সুবিধাজনক ভাবে তৈরি হয়েছে। গাড়ির গজ ও ডায়াল হোন্ডা সিভিক-এ চালকের দৃষ্টির সুবিধার্থে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে বসানো এবং এর সেরা জিনিস হল এর টার্বো গজ। গাড়ির বাটনগুলো অনেকটা লুকোনো অবস্থানেই স্থাপিত যা গাড়িকে দিচ্ছে এক পরিচ্ছন্ন ইন্টিরিয়র।
মান বিচারঃ
নতুন হোন্ডা সিভিক আমার ১৯৯৭ সালের গাড়িটির কথা মনে করিয়ে আমাকে নস্টালজিক করে দেয়,তবে নতুন এই মডেলটি নিঃসন্দেহে ক্লাসিক মডেলটিকে থেকে ঢের ভালো। এবং অবশ্যই এর নতুন টার্বো ইঞ্জিন ও জ্বালানী সাশ্রয়ী ব্যবস্থা একে দিয়েছে ব্যবহার অভিজ্ঞতা ও গুণগত মান বিচারে বাজারের অন্যতম সেরা গাড়ির সম্মান।
ঢাকার রাস্তায় আপনি ইতিমধ্যেই দেখে থাকবেন হোন্ডা সিভিকের এই নতুন মডেলের অসাধারণ গাড়িটিকে।
নতুন এই হোন্ডা সিভিক এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা।
আপনি যদি বাংলাদেশে হোন্ডা ব্র্যান্ডের কোন গাড়ি কেনার কথা ভেবে থাকেন আপনার জন্য অবশ্যই পরামর্শ থাকবে হোন্ডা সিভিকের নতুন মডেলের গাড়িটি নেয়ার।
এছাড়াও আপনি আপনার পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন হোন্ডা অ্যাকর্ড এর গাড়ি যাতে আপনি পাবেন নজরকাড়া ইন্টিরিয়র ডিজাইন, শক্তিশালী টার্বো চার্জড ইঞ্জিন ও অত্যাধুনিক ইনফরমেশন সিস্টেম। হোন্ডা অ্যাকর্ড এ আরও রয়েছে বিলাসবহুল ফিচার, টেক গ্যাজেটস ও সেইফটি গিয়ার।
নতুন গাড়ির কিছু আকর্ষণীয় ফিচারঃ
১) সেল্ফড্রিভেন
আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি বর্হিবিশ্বের অনেক গাড়ি প্রস্তুতকারক সেল্ফ ড্রিভেন বা স্বয়ংক্রিয় চালনার গাড়ি নির্মাণে এগিয়ে আসছেন। টেকনোলোজির ক্রমবর্ধমান উন্নতির কারনে নতুন যুগের গাড়িগুলোতে অটোপাইলট ফিচারের মাধ্যমে ক্যামেরা, রাডার, ৩৬০ ডিগ্রী সোনার সেন্সরকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্পিড কন্ট্রোল, লেন পরিবর্তন, পার্কিং এর ফিচারগুলোও থাকবে এসব গাড়িগুলোতে। ঢাকার জ্যামযুক্ত ব্যস্ত রাস্তায় বর্তমানে এটি ভাবা অসম্ভব মনে হলে সামনের দিনে এটি বাস্তবে রূপ নিতেই পারে।
২) বিল্ট ইন ফোরজি ওয়াই-ফাই হটস্পট
ভবিষ্যতের গাড়িগুলোয় থাকবে বিল্ট ইন ফোরজি ওয়াই-ফাই হটস্পট ফিচার। মোবাইল ডাটা কিংবা ইন্টারনেটের অন্য কোন সোর্স ছাড়াই তখন আপনার ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ থাকবে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। তবে এই কথাটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, ড্রাইভিং অবস্থায় কোনভাবেই মোবাইলের ব্যবহার চলবেনা, কারণ সেফটি ফাস্ট।
৩) ক্যামেরা
ব্যাকগিয়ারে চালনার সময়ে ব্যবহৃত ক্যামেরা ফিচারটিতো ইতিমধ্যেই গাড়িগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে নতুন যুগের ক্যামেরাগুলো দিয়ে গাড়িকে ৩৬০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে পর্যবেক্ষন করা যাবে। এটি আপনাকে আসন্ন কোন বিপদের হাত থেকে বাঁচাবে।
৪) স্বয়ংক্রিয় ডোর
আপনার দুই হাত যদি শপিং ব্যাগ, মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকে তবে চিন্তা নেই, নতুন যুগের গাড়িগুলোতে রয়েছে অটোমেটিক ডোর যেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেউ গাড়িতে ঢোকার সময় এর দরজা খুলে দেবে। স্মার্ট টেকনোলোজির মাধ্যমে গাড়ির চাবি পকেটে নিয়েই গাড়িতে পাবেন চাবি ছাড়া এন্ট্রি।
৫) স্বয়ংক্রিয় উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার
গাড়িতে উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার এর কাজ হল ময়লা, পানি থেকে গাড়ির গ্লাসকে পরিচ্ছন্ন রাখা। বর্তমান গাড়িগুলোতে এটিকে চালু ও বন্ধ করতে হয়, কিন্তু আগামীদিনের গাড়িগুলো গ্লাসে প্রতিবন্ধকতা লক্ষ্য করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে যাবে উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার। যার মাধ্যমে আপনি উপভোগ করবেন অসাধারণ ড্রাইভিং এক্সপিরিয়েন্স।
শেষকথাঃ
ফিচার ও নির্ভরযোগ্যতায় হোন্ডা ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর দাম নিঃসন্দেহে ভ্যালু ফর মানি। সারাবিশ্বের অন্যতম সেরা গাড়ি প্রস্তুতকারক ব্র্যান্ড হিসেবে হোন্ডা ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো বিনা দ্বিধায় থাকতে পারে আপনার ভবিষ্যয় ক্রয়ের তালিকায়।
মধ্য আকৃতির সেডান গাড়ির তালিকায় হোন্ডা ছাড়া টয়োটা, হুন্দাই, নিসান ও অন্যান্য ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোও রয়েছে ঢাকা ও বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের পছন্দের তালিকায়।
Bikroy.com এ নিয়মিত ভিজিট করে খুঁজুন ব্যবহৃত ও রিকন্ডিশন গাড়ি, বাইক, মোটরসাইকেল সহ নানা পদের যানবাহন, ইলেকট্রনিক্স সহ নানা কিছু। অবিশ্বাস্যভাবে বিস্তৃত মার্কেটপ্লেস হিসেবে শুধুমাত্র কেনা-বেচা নয়, দেশজুড়ে চাকরি ও আবাসন ব্যবসায় আসল ও নির্ভরযোগ্য ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মিলনস্থল তৈরি করার মাধ্যম এই Bikroy.com।
আর হ্যাঁ, রাস্তায় চলাকালীন ট্রাফিক আইন মেনে চলতে ভুলবেন না যেনো। সঙ্গে সেফটি উপকরণ যেমন সিটবেল্ট এর কথাও অবশ্যই বিবেচনায় রাখবেন।
স্বয়ংক্রিয় বিল্টইন ভ্যাকিউম ক্লিনিংব্যবস্থা থেকে শুরু করে বাটন টিপে গিয়ার পরিবর্তন, হোন্ডা ব্র্যান্ডের গাড়ির কোনটি আপনার সবচেয়ে পছন্দসই ফিচার? রাজধানী ঢাকার রাস্তায় সেল্ফ ড্রিভেন গাড়িতে আপনি চড়তে চান কোনোদিন?
আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদেরকে কমেন্টে জানান।