প্রপার্টি

এক নজরে বাংলাদেশের প্রপার্টি মার্কেট

২০১৯ সালে Bikroy এর ডাটা অনুযায়ী

প্রায় ২ কোটি বাসিন্দার আবাসস্থল ঢাকায় রিয়েল এস্টেট একটি অন্যতম দ্রুত বর্ধমান নগরী। দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ার সুবাদে অন্য যেকোনো শহরের তুলনায় এই শহরকে অধিক সংখ্যক মানুষ বসবাসের জন্য বেছে নেয়, যা এর জমি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশাল চাহিদা সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগের জন্য প্রপার্টি একটি লাভজনক সেক্টর এবং অনেকেই শহরকে বিস্তৃত করা, বসবাসের জন্য বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস নির্মাণের মতো কাজের সাথে জড়িত। তথ্য আদান-প্রদানের এই যুগে ক্রেতা ও বিক্রেতাগণ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সংযুক্ত। বাংলাদেশে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে এবং হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনস্থল হিসেবে Bikroy বেশ অনেক বছর ধরেই নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কারণেই দেশের সবচেয়ে বড় প্রপার্টি কেনা-বেচার প্ল্যাটফর্ম – Bikroy এর অ্যাড পোস্ট, সার্চ ইত্যাদি বিভিন্ন ডাটা বর্তমানে মার্কেট ট্রেন্ড এবং চাহিদা পর্যালোচনায় মানদন্ড হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। এই প্রতিবেদনে আমরা ২০১৯ সালে Bikroy ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী সে বছরে প্রপার্টি মার্কেট বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি।

প্রপার্টি বিক্রির জন্য সেরা লোকেশন

প্রপার্টি বিক্রির জন্য সেরা লোকেশন

সবচেয়ে বেশি প্রপার্টি কেনা-বেচা লোকেশনের তালিকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নাম প্রথম স্থানে থাকা মোটেও নতুন বা বিস্ময়কর কোনো ঘটনা নয়। বিগত চার দশক ধরে এই এলাকাটি ফ্ল্যাট, প্লট বা জমি কেনার ক্ষেত্রে হটস্পট হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিশাল এলাকা হওয়ায় এর অনেক স্থানে এখনো ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে, কিন্তু মজার বিষয় হলো, বর্তমানে এই এলাকার মোট আয়তনের এক-তৃতীয়াংশেরও কম অংশে ডেভেলপমেন্ট এবং মানুষের বসবাস রয়েছে। এই তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিরপুর যা ঢাকা শহরের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ জুড়ে আছে। এই দুই এলাকার পরে ২০১৯ সালে সর্বাধিক বিক্রিত প্রপার্টি লোকেশনের তালিকায় যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম অবস্থানে আছে উত্তরা, গুলশান এবং লালবাগ।

প্রপার্টি ভাড়ার জন্য সেরা লোকেশন

প্রপার্টি ভাড়ার জন্য সেরা লোকেশন

ফ্ল্যাট বা কমার্শিয়াল স্পেস ভাড়ার জন্য পোস্ট করা সর্বাধিক সংখ্যক বিজ্ঞাপনগুলো হচ্ছে গুলশান এলাকার। এর সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে এখানে ভাড়ার জন্য অনেক অফিস স্পেস খালি রয়েছে। চাকরির জন্য এদেশে আসা অধিকাংশ বিদেশীদেরই ফ্ল্যাট ভাড়ার লোকেশন হিসেবে প্রথম পছন্দ গুলশান, তার পরের অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশি এলাকা বারিধারা – যা ভাড়ার জন্য প্রপার্টির লিস্টিং-এ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। বারিধারা এলাকাটির একটি অংশ হচ্ছে ডিওএইচএস, যা গুলশান এবং বনানী এলাকায় চাকরিরত মানুষদের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালে প্রপার্টি ভাড়ার লোকেশন হিসেবে তৃতীয় স্থানে আছে মিরপুর। 

দাম অনুযায়ী প্রপার্টির তালিকা

ভাড়ার জন্য

দাম অনুযায়ী ভাড়ার জন্য প্রপার্টির তালিকা

২০১৯ সালে ভাড়ার ক্ষেত্রে এটি মূল্যসীমা বিবেচনায় সর্বাধিক তালিকাভুক্ত (এবং একই সাথে সর্বাধিক জনপ্রিয়) প্রপার্টির চিত্র তুলে ধরে। দেখা যায় যে, ভাড়ার জন্য পোস্ট করা সর্বাধিক (২১%) বিজ্ঞাপনগুলোয় প্রতি মাসে ভাড়া চাওয়া হয়েছিলো বাংলাদেশি টাকায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। অপরদিকে, সবচেয়ে কম অংশ (৪%) পোস্ট করা বিজ্ঞাপনে ভাড়া চাওয়া হয়েছিলো বাংলাদেশি টাকায় বিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা।

বিক্রির জন্য

দাম অনুযায়ী বিক্রির জন্য প্রপার্টির তালিকা

বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রপার্টি বর্গফুট দ্বারা নির্ধারিত হয়,  যা সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে ভালো দাম পেতে অনেকটাই সহায়তা করে। দেখা গেছে, ২০১৯ সালে বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রপার্টির দাম ছিলো বর্গফুট প্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে, তাছাড়া তালিকার দ্বিতীয় সর্বাধিক বিজ্ঞাপনগুলি ছিলো বর্গফুট প্রতি ১০ হাজারের উপরে। কিন্তু এটাও লক্ষ্য করা গিয়েছে যে বর্গফুট প্রতি ৯ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে সর্বনিম্ন বিজ্ঞাপন পোস্ট হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র জমির আকার বা আয়তনের উপর এর প্রতি বর্গফুট এর দাম নির্ভর করে না, বরং জমির অবস্থান ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়ও এর সাথে সম্পৃক্ত।  

সম্পত্তি কেনার ট্রেন্ড

সম্পত্তি কেনার ট্রেন্ড

দেখা যাচ্ছে, সম্পত্তি বিক্রির জন্য পোস্ট করা বিজ্ঞাপনের সংখ্যাটি সারা বছরই ওঠানামা করলেও বিজ্ঞাপনগুলির মাধ্যমে বিক্রি হওয়া সম্পত্তির সংখ্যা প্রতি মাসে মোটামুটি একই রয়েছে। তদুপরি  জানুয়ারিতে বিক্রি সর্বাধিক ছিলো, এরপর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সময়টিতে তা আবার শীর্ষে পৌঁছেছে, যা শীতকালে বেশিরভাগ সম্পত্তির বিক্রি হওয়ার ট্রেন্ড/প্রবণতা নির্দেশ করে।

নতুন বনাম ব্যবহৃত ফ্ল্যাট

নতুন বনাম ব্যবহৃত ফ্ল্যাট

পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো, ফ্ল্যাট এবং অ্যাপার্টমেন্ট এর জন্য বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন (৯২%) বর্তমানে সদ্য নির্মিত, এতে করে বোঝা যাচ্ছে যে, সদ্য নির্মিত ফ্ল্যাটের মালিকরা Bikroy এ বেশি বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। এর মূল কারণ, এখানে তারা পাচ্ছেন দ্রুত ও সুবিধাজনকভাবে বিক্রি ও ভাড়া দেয়ার সুযোগ।

বিটুবি মার্কেট শেয়ার

বিটুবি মার্কেট শেয়ার,  ফ্ল্যাটের অবস্থা এবং সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত এলাকা

দেখা গিয়েছে, প্রপার্টি কেনাবেচার ক্ষেত্রে Bikroy এর অবস্থান প্রচলিত অন্যসব প্রপার্টি সংক্রান্ত প্ল্যাটফর্মগুলির তুলনায় অনেক এগিয়ে। Bikroy এর বিটুবি মার্কেট শেয়ার ৫৫% যেখানে অন্যদের ক্ষেত্রে তা ৪৫%।

সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত এলাকা

সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত এলাকা

আমরা আরও লক্ষ্য করতে পারি যে, ২০১৯ সালে বসুন্ধরা এলাকাটি ছিলো Bikroy এ সর্বাধিক সন্ধানকৃত এলাকা, এরপর ক্রমান্বয়ে গুলশান, উত্তরা, ধানমন্ডি এবং মোহাম্মদপুর। এছাড়াও পূর্বের তথ্য থেকে জানা যায়, সম্পত্তি বিক্রির তালিকায়ও বসুন্ধরা এলাকাটি সবচেয়ে এগিয়ে।

সম্পত্তির দাম মূল্যায়ন

সম্পত্তির দাম মূল্যায়ন

২০১৯ সালের ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেটের বাজারে কিছুটা আশার আলো দেখা যাবে। তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ২০২৫ সালের মধ্যে জমির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকবে কেরানীগঞ্জ এলাকাটি। আর ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে মোহাম্মদপুর ও উত্তরার অ্যাপার্টমেন্টগুলির দাম আগামী ৫ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে ধারণা করা যায়। পাশাপাশি সদ্য গড়ে ওঠা পূর্বাচলের জমিও অনেক বেশি মূল্যবান হয়ে উঠবে। তাছাড়া বর্তমানে প্রপার্টির দামের ক্ষেত্রে  মিরপুর, বসুন্ধরা, মোহাম্মদপুর ও উত্তরা কাছাকাছি রয়েছে, এই সকল অঞ্চলগুলির দামও তুলনামূলকভাবে ৫ বছরের মধ্যে কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।

যদিও এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলি করোনভাইরাস পরিস্থিতির পূর্বে করা হয়েছিলো, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে দেশের রিয়েল এস্টেটের উপরে এর প্রভাব অন্যান্য খাতে তুলনায় যথেষ্ট কম হবে, এর প্রধান কারণটি হচ্ছে আবাসন একটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা এবং এর চাহিদা সর্বদা থাকবে।

চট্টগ্রাম, সিলেট এবং খুলনার প্রপার্টি বিজ্ঞাপনসমূহ

Bikroy এ অধিকাংশ বিজ্ঞাপন ঢাকা থেকে পোস্ট করা হলেও দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও এখানে বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন পোস্ট করা জেলাগুলো হলো যথাক্রমে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং খুলনা। এরপরই তালিকায় রয়েছে রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল এবং রংপুর। চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয় হালিশহর, খুলশী এবং আগ্রাবাদ থেকে। সিলেটের বেশি বিজ্ঞাপনগুলো আসে জিন্দা বাজার, শাহ পরান এবং আম্বরখানা থেকে। আর খুলনার টপ লোকেশনগুলো হচ্ছে সোনাডাঙ্গা, রায়ের মহল এবং খুলনা সদর।

শেষকথা

বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেটের বাজারটি অত্যন্ত লাভজনক তাই সঠিক বিনিয়োগের পূর্বে আরও গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তবে Bikroy থেকে পাওয়া তথ্যগুলি বাংলাদেশে প্রপার্টির বাজারে একটি দ্রুত ও সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে বেশ দুর্দান্ত কাজ করে। ২০২০ সালের তথ্যগুলি পরের বছরের শুরুতে একেবারে আলাদা হতে পারে, যেহেতু আমরা বিশ্বব্যাপী একটি অভূতপূর্ব অবস্থার সম্মুখীন। তবে এখন পর্যন্ত সাধারণ অনুমান এই যে, সংকট চলাকালীন সময়ে সম্পত্তির বাজার অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল থাকবে এবং আশা করি এই অবস্থার অবসান ঘটলে সবকিছু অনেক ভালোভাবে আবার ফিরে আসবে।

আমরা পাঠকদের অনুরোধ করছি, সচেতন থাকুন এবং কোয়ারেন্টাইনের এই সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। অনুগ্রহ করে বাড়িতে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

পুরো ইনফোগ্রাফিকটি দেখতে নিচের লিংক গুলো ক্লিক করুনঃ

পিন্টারেস্টঃ বাংলাদেশের প্রপার্টি মার্কেট

স্লাইডশেয়ারঃ বাংলাদেশের প্রপার্টি মার্কেট

Property for sale in DhakaProperty for sale in Chattogram
Property for sale in Dhaka DivisionProperty for sale in Khulna Division
Property for sale in SylhetProperty for sale in Chattogram Division
Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close