সাক্ষাৎকারের সময় চাকরি প্রার্থীদের করণীয় ও বর্জনীয়
চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একটি ধাপ হচ্ছে সাক্ষাৎকারের আমন্ত্রণ পাওয়া। আপনি নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন যিনি আপনার সম্পর্কে আরও জানতে চান। চাকরি প্রাপ্তির এই ধাপটিতে সবচেয়ে বেশী মানসিক চাপ থাকে। এই পরামর্শগুলো আপনাকে আপনার অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিগত মিথস্ক্রিয়ার সাহায্যে আত্মবিশ্বাসের সাথে সাক্ষাৎকার দিতে এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে মুগ্ধ করতে সহায়তা করবে।
করণীয়
সাক্ষাতের পূর্বে সাক্ষাৎকারের স্থান খুঁজে বের করুন
যে সময়ে সাক্ষাৎকার সেই রকম সময়ে আগেভাগেই একবার পরীক্ষামূলকভাবে সেই পথে ঘুরে আসুন। যদি সাক্ষাৎকারের সময় বুধবার সকাল ১০ টা হয় তবে, মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় আপনি নিজের বাহনে বা গণ পরিবহনে করে সেই জায়গা থেকে ঘুরে আসুন। এতে করে আপনার ধারণা হবে সেখানে যেতে কী রকম সময় লাগতে পারে এবং আপনি জানবেন যে সাক্ষাৎকারের দিন আপনাকে ঠিক কোথায় যেতে হবে। সাক্ষাৎকারে দেরীতে পৌঁছানোর মতো খারাপ আর কিছু হতে পারে না। এটি আপনার জন্য কলঙ্কের এবং নিয়োগকর্তা আপনাকে নিয়োগ দেবেন না।
সাক্ষাৎকারের জন্য অনুশীলন করুন
কোনো বিশ্বাসযোগ্য বন্ধুকে দিয়ে প্রশ্ন করান। সাক্ষাৎকারের সময়, আপনি নির্দ্বিধায় সব প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইবেন। যে আপনার সাথে সাক্ষাৎকারের অনুশীলনে সাহায্য করবে তাঁকে খুঁজে বের করতে হবে কোথায় আপনার সমস্যা রয়েছে। আপনি কি উত্তর দেওয়ার জন্য বেশী সময় নিচ্ছেন? আপনি কি কিছু ভুল করছেন? যিনি আপনার অনুশীলন সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছেন তাঁকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ খবর করুন
আপনি ঢাকা বা দেশের যেখানেই চাকরি খুঁজুন না কেনো, নিশ্চয়ই আপনি ডজন ডজন সিভি পাঠিয়েছেন ও খোঁজ নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে শুন্য পদ রয়েছে সেটি ছাড়া আপনি হয়তো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আর তেমন কিছুই জানেন না। সাক্ষাৎকারের পূর্বে আপনাকে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কাজ কী সে সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে কখনই সাক্ষাৎকার দিতে যাবেন না।
সঠিক পোশাক পরিধান করুন
অফিসটি ক্যাজুয়াল হতে পারে বা গ্রীষ্মের চরম সময় হতে পারে, আপনাকে সঠিক পোশাক পড়তে হবে। অর্থাৎ পুরুষের স্যুট ও টাই এবং মেয়েদেরকেও সঠিক পোশাক পরিধান করতে হবে। সেটি কালো প্যান্টের সাথে সুন্দর ব্লাউজ বা স্ল্যাক ও ব্লেজার হতে পারে। কখনই শর্টস, পুরনো টি শার্ট বা জিন্স পড়ে যাবেন না।
প্রস্তুতি নিয়ে আগেভাগেই পৌঁছে যাবেন
সবসময় সাক্ষাৎকারে আগে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। যদি আপনি ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে চলে যান তবে তাতে আপনার আগ্রহ ও নিষ্ঠা প্রকাশ পায়, যা একজন নিয়োগকর্তা তাঁর কর্মকর্তার মধ্যে দেখতে চান। তাঁরা সেটি খেয়াল করবেন। নিয়োগকর্তার জন্য আপনার রেজ্যুমের একাধিক কপি নিয়ে যাবেন। কারণ সেখানে একাধিক লোক থাকতে পারেন বা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর একাধিক কপি প্রয়োজন হতে পারে। সাক্ষাৎকারের সময় আপনার সাথে কাউকে নিয়ে আসবেন না। যদি কাউকে আনতেই হয় তবে তাঁকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলুন।
ভালো শারীরিক ভাষা বজায় রাখুন
একজন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সাথে প্রথম দেখায় তাঁর সাথে চোখে চোখ রেখে দৃঢ়ভাবে হ্যান্ডশেক করবেন। আপনি সাক্ষাৎকারের সময় আত্মবিশ্বাসী থাকবেন, আগ্রাসী নয়। চোখে চোখ রাখবেন কিন্তু লম্বা সময় ধরে তাকিয়ে থাকবেন না। পরিচয় পর্বের পর, বসার পূর্বে অনুমতি নিন। আপনার আসনে কোনো রকম নড়াচড়া ছাড়া সোজা টানটান হয়ে বসুন।
বর্জনীয়
আগের নিয়োগকর্তাদের বদনাম করা
আপনাকে যদি ছাঁটাই করা হয়ে থাকে বা আপনার সহকর্মীর জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়ে থাকেন, তবে চাকরি ছাড়ার কারণ ভালো ভাষায় ব্যাখ্যা করে বলুন। শূন্য পদে লোক নেবার সময় নিয়োগকর্তারা এমন কাউকে খোঁজেন যিনি অন্য সহকর্মীদের সাথে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন এবং কোনো ঝামেলা তৈরি করবেন না। পুরনো নিয়োগকর্তাকে গালাগাল করলে মনে হবে আপনি ঝামেলা তৈরি করতে পারেন, বা তা শ্রুতিকটু শোনাবে। নতুন নিয়োগকর্তার মনে আপনি নিশ্চয়ই সেরকম ধারণা তৈরি করতে চাইবেন না।
মনে কোনো উত্তর আসলে তা বলে ফেলা
এই জায়গায় আপনার অনুশীলনমূলক সাক্ষাৎকার কাজে লাগবে। আপনি যদি আপনার উত্তরগুলো অনুশীলন করে থাকেন, তবে আপনি নির্দ্বিধায় বলে যেতে পারবেন। আপনি যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানেন তবে একটু থেমে চিন্তা করুন। মুখে যা আসে তাই বলে ফেলবেন না, এবং তোতলাবেন না বা চিন্তা করার সময় বিড়বিড় করবেন না। ঠাণ্ডা মাথায় কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করুন কী উত্তর দেবেন এবং মুখে হাসি নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিন।
বেতন বা অন্যান্য সুবিধার কথা জিজ্ঞেস করা
দাপ্তরিক কাজ বা অন্য যে কাজই হোক না কেন, নিয়োগকর্তা সবসময় কাজের ব্যাপারে আগ্রহী কাউকে দেখতে চাইবেন, এমন কাউকে নয় যিনি কত বেতন পাবেন সে নিয়ে চিন্তিত থাকেন। আপনি হয়তো অর্থের জন্য চাকরি খুঁজছেন, আপনি এমন চাকরি চাইবেন যেখানে চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং তৃপ্ত হতে পারবেন। নিয়োগকর্তারা চান আপনি একজন টিম মেম্বার হবেন এবং কেবল টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না বা অবসর সময় কাটাতে আসবেন না।
সেল ফোনে কল রিসিভ করা
সাক্ষাৎকারের সময় সবচেয়ে বড় ভুল হতে পারে এটি। ভবনে প্রবেশ করার পূর্বেই আপনার ফোনটি বন্ধ করে নিন। ফোন বেজে উঠলে তা সাক্ষাৎকারে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এবং এতে প্রমানিত হয় আপনি দূরদর্শী নন। আরও খারাপ হবে যদি আপনি ফোনের উত্তর দেন। ফোনে যিনিই থাকুন না কেন তিনি আপনার সাক্ষাৎকার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবেন। সাক্ষাৎকারের সময়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।
মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বা বানিয়ে উত্তর দেওয়া
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ, কিন্তু আপনার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা নিয়ে মিথ্যে বলবেন না বা বানিয়ে বলবেন না। প্রশ্ন যদি কঠিন হয় তবে সেটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী কোনো বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন। সে বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা আছে এমন ভান করবেন না, কিন্তু একই রকম কাজ বা সমস্যা সমাধান করে থাকলে সেই অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করুন, এবং ইতিবাচকভাবে উত্তর দিন। এই কারণেই সাক্ষাৎকারের পূর্বে কোনো বন্ধুর সাথে অনুশীলন করবেন।
আপনার ব্যকুলতা প্রকাশ করবেন না
চাকরির বাজার অনেক কঠিন হতে পারে, কিন্তু কোনো চাকরির জন্য আপনার ব্যাকুলতা প্রকাশ করবেন না। নিয়োগকর্তা সবসময় আলাদা মর্যাদা পেতে পছন্দ করেন। আপনি হয়তো সম্ভাব্য অনেক জায়গায় ডজনে ডজনে সাক্ষাৎকার দিয়ে বা শত শত সিভি পাঠিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন। আপনি এমনভাবে আচরণ করুন যেন এটিই আপনার একমাত্র পছন্দ কিন্তু এটাই আপনার শেষ চেষ্টা নয়।
সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে নিয়োগকর্তার সাথে প্রথম দেখায় তাঁর মনে ভালো ধারণা সৃষ্টি করতে পারা। কাগজে কলমে, আপনার হয়তো অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন্তু নিয়োগকর্তার কাছে আপনাকে উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে হতে হবে।