চাকরি খুঁজছেন? যে কাজগুলো করলে চাকরি হবেই
একজন সদ্য-গ্রাজুয়েট কিংবা ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র/ছাত্রীর জন্য চাকরি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন একটা ব্যাপার। আর মনের মত একটা কাজের সন্ধান পাওয়ার পর সেই চাকরিটাই পেতে আবার অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। গ্র্যাজুয়েট হোন বা ভার্সিটি-পড়ুয়া, এটা জেনে রাখা দরকার যে স্বপ্নের চাকরিটি পাবার জন্য শুধু ডিগ্রী থাকাটাই যথেষ্ট নয়। সুযোগ আসলে যেন আপনি পুরোপুরি প্রস্তুত থাকতে পারেন সেজন্য আপনাকে জানতে হবে যে এই যাত্রায় আপনার জন্য কি কি অপেক্ষা করে আছে।
স্বপ্নের চাকরির খোঁজ শুরু করার সময় কিছু বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ আপনাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিতে পারে–
নিজেকে জানুন ও বুঝুন
নিজেকে নিয়ে ভাবার জন্য একটু সময় নিন। আপনি কী হতে চান এবং আপনার অবস্থান ঠিক কোথায় সেটা ভেবে দেখুন। আপনার সাধনা আর উচ্চাকাঙ্খাগুলো কী কী? আপনি ঠিক কি ধরনের ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন আর কিভাবেই বা সেই লক্ষ্য অর্জন করবেন? এই ধাপের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলেই নিজের সামর্থ্য আর সীমাবদ্ধতাগুলো জানা যায়।
আপনার দক্ষতাকে ঝালাই করে নেয়ার আর গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাওয়ার এটাই মোক্ষম সময়। অনলাইনে বিভিন্ন চাকরির ওয়েবসাইট ঘুরে দেখুন আর বুঝে নিন আপনার স্বপ্নের চাকরিটি পেতে হলে আপনাকে কী কী বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে! নিজের ভুলগুলো শুধরে নিন, প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করুন আর পরবর্তী ধাপের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিন।
আপনার সিভি তৈরি করুন এবং সেটি যাচাই করিয়ে নিন
চাকরি পাবার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস হলো একটি ভালো মানের সিভি। চাকরিদাতারা প্রতিদিন একই পজিশনের জন্য কয়েক ডজন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েক শত সিভি দেখে থাকেন। শত শত সিভির ভিড়ে যদি নিজেকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে না তুলতে পারেন তবে আপনি শুরুতেই পিছিয়ে পড়বেন।
শুধু সিভি বানালেই চলবে না, একে যাচাই করিয়ে নেওয়াটাও জরুরি। আপনি যেই পজিশনে কাজ করতে চান সেখানে বর্তমানে কাজ করছেন এমন কোন অভিজ্ঞ লোকের কাছে আপনার সিভিটি দেখান। এতে করে তারা আপনাদের সিভিতে থাকা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ভুল আপনাকে ধরিয়ে দিতে পারবেন। সেরা কিছু পেতে চাইলে আপনাকেও সেরা হতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের আরেকটি প্রবন্ধ থেকে কিভাবে সুন্দর একটি জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) লিখতে হয় জেনে নিন।
সঠিক লোকের সাথে কথা বলুন
আপনার চাকরির সন্ধানে সাহায্য করতে পারে এবং আপনাকে পথ দেখাতে পারে এমন লোকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুন। বিভিন্ন এডভাইসরদের সাথে দেখা করলে সবকিছু ভালভাবে শুরু করতে পারবেন। তারা আপনাকে সেখাবে কি করে চাকরির জন্য আবেদন করতে হয় আর আপনার স্বপ্নের পজিশনে চাকরিদাতারা কী কী বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
আপনার কলেজ বা ভার্সিটিতে নিয়োজিত এডভাইসরদের সাথে আলাপ করে জেনে নিন আপনার সব একাডেমিক কার্যকলাপ ঠিক আছে কিনা আর ভবিষ্যতে আপনার সম্ভাবনা কতটুকু। আপনাকে সঠিক পরামর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ যোগ-সংযোগ দিতে পারেন এমন যেকোন মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখুন, হতে পারেন তিনি আপনার অধ্যক্ষ, সুপারভাইসর অথবা অন্য কেউ। এতে আপনার ভবিষ্যত ক্যারিয়ারে ভালো করার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে।
ওয়ার্কশপে যান
বিভিন্ন ক্যারিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সারা বছর অনেক ওয়ার্কশপ আয়োজন করে থাকেন। এসব ওয়ার্কশপ শিক্ষার্থীদের ইন্টারভিঊ এর দক্ষতা, নেটওয়ার্ক আর ভালো মানের সিভি তৈরির ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে। এমন কিছু ইভেন্ট রয়েছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের চাকরি সন্ধানের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে শেখায়, একই সাথে চাকরিদাতাদের সামনে কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয় এবং দক্ষতার পরিচয় দিতে হয় সে সম্পর্কেও ধারনা দিয়ে থাকে।
পছন্দের কাজের জন্য সেরা ও জনপ্রিয় কোম্পানিগুলো খুঁজুন
আপনার পছন্দের কাজের ক্ষেত্রে কোন কোন কোম্পানি ভালো সেগুলো খুঁজে বের করুন–সেগুলো ছোট হোক বা বড়, আপনার নিজের এলাকায় হোক কিংবা ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছা আছে এমন এলাকায়। কোম্পানিগুলোর নাম বের করে নিয়ে সেখানে কি কি সম্ভাবনা রয়েছে তা খুঁজে বের করুন।
যখন আপনি আপনার পছন্দমত কোম্পানিতে কোন চাকরির অফার পেয়ে যান, তবে আপনার চূড়ান্ত সিভি তাদেরকে পাঠান। সেই সাথে ঐ বিশেষ কোম্পানিতে ঐ বিশেষ পজিশনে চাকরির জন্য একটি কভার লেটার বিশেষভাবে তৈরি করে পাঠান।
চাকরির ইন্টারভিউ প্র্যাক্টিস করুন
ফোন, স্কাইপ অথবা মুখোমুখি–যেমন ইন্টারভিউই হোক না কেনো, কি কি ঘটতে পারে আর কিসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন সেগুলো আগে থেকেই জেনে নেওয়া দরকার। কিছু ক্যারিয়ার সার্ভিস এমন ইন্টারভিউ প্রোগ্রাম আয়োজন করে থাকেন যেখানে শিক্ষার্থী ও গ্র্যাজুয়েটরা সত্যিকারের চাকরিদাতাদের সাথে ইন্টারভিউ দেয়ার চর্চা করতে পারেন এবং নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার প্রার্থীদের সত্যিকারের চাকরির অফার দিয়ে থাকেন।
নিজের মধ্যে একটা প্রফেশনাল লুক আনার চেষ্টা করুন
আপনার ভালো লাগুক বা না লাগুক, চাকরির ক্ষেত্রে বাহ্যিক আউটলুক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি যেই ক্ষেত্রে কাজ করতে ইচ্ছুক সেই ক্ষেত্রের জন্য মানানসই পোশাক-আশাকের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করুন। এটার গুরুত্ব অনেকখানি, তবে সেজন্য সামর্থ্যের বাইরে খরচা করতে গিয়ে হেনস্থা হবেন না যেনো! খুঁজে খুঁজে যেসব মার্কেটপ্লেসে ভালো অফার আর ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় সেখান থেকে কেনাকাটা করুন। প্রয়োজনে বাড়তি খরচ কমিয়ে ফেলুন আর কিছু টাকা জমিয়ে ফেলুন।
গুছিয়ে কাজ করুন
হয়ত ইতোমধ্যে স্বপ্নের চাকরিটি পাবার জন্য অনেক কোম্পানিতে সিভি দিয়ে যাচ্ছেন আর বিভিন্ন রকম পজিশনের চাকরির জন্য আবেদন করে যাচ্ছেন। এই তথ্যগুলো গুছিয়ে না রাখলে একটা সময় সবকিছু গুবলেট পাকিয়ে যেতে পারে আর আপনি বিব্রত হতে পারেন। একটি এক্সেল শীট অথবা ডকুমেন্ট তৈরি করুন যেখানে বিভিন্ন কোম্পানির নাম ও আপনি কোন পজিশনে আবেদন করছেন সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য লিখে রাখুন।
গুছিয়ে কাজ করলে আপনার নিজের কাজ সম্পর্কে একটা দখল আর নিয়ন্ত্রণ চলে আসে; চাকরি পাবার পরও এই গুন আপনার কাজে আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে আপনার বেড়ে ওঠা ও সমস্ত কার্যকলাপের হিসাব রাখতে এই অভ্যাসের জুড়ি নেই।
অনলাইনে আপনার প্রোফাইল তৈরি করুন
সামাজিক গণমাধ্যম গুলো এখন আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে; চাকরি খোঁজার জন্য অনলাইন এখন সবচেয়ে বড় একটি মাধ্যম। আপনার জন্য ভাল বা খারাপ দুরকম প্রভাবই ফেলতে পারে। সবই নির্ভর করছে আপনি কিভাবে অনলাইনে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারছেন তার উপর।
একটি সুসজ্জিত লিঙ্কডইন (LinkedIn) প্রোফাইল আপনার অনেক কাজ সহজ করে দিতে পারে। আপনার সকল তথ্য সঠিকভাবে আপ-টু-ডেট রাখার চেষ্টা করুন। একই সাথে ফেসবুক, টুইটার আর অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোতে কী পোস্ট করছেন সেইদিকেও সতর্ক হউন।
বন্ধন গড়ে তুলুন
চাকরির খোঁজ বেশ লম্বা একটা পদ্ধতি, আর এই সময়টায় মানসিকভাবে আপনার উপর দিয়ে অনেক ধকল যায়। এই সময় আপনার কাছের মানুষদের মনোবল আপনাকে নতুন উদ্দীপনা যোগাতে পারে। আপনার কাছের বন্ধুবান্ধব,পরিবার পরিজন ও মেন্টরদের সাথেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন। চাকরি খোঁজা ও পাওয়ার লম্বা রাস্তায় লক্ষ্য, উদ্দীপনা আর আশাবাদী থাকাটা খুবই জরুরি।
সফলদের অনুসরণ করুন
সফল হবার জন্য সফলদের অনুসরণ করার জুড়ি নেই। আপনি যেই পজিশনে পৌঁছাতে চান সেখানে যারা ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন তাদের দেখুন আর কথা বলুন। আপনার পছন্দের ক্ষেত্রে প্রফেশনাল কারো সাথে আলাপ-আলোচনা আপনাকে অনেকখানি সাহস আর কাজ করার প্রেরণা যোগাবে।
নিজেকে সহনশীল ও নম্র করে তুলুন
আমরা শুরুতেই অনেক কিছু চাই–সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে বেশি, সবচেয়ে আকর্ষণীয় পজিশনটাই আমাদের দরকার। তার আগে আমরা এগোতে চাই না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনাকে গতানুগতিকের বাইরে ভাবা উচিৎ আর সুযোগসন্ধানী হওয়া উচিৎ। অনেক ভালো ভালো সুযোগ আপনার আশেপাশে ঘুরছে যেখানে হয়ত প্রাথমিকভাবে আপনার জন্য সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে না, অথবা আপনার আগ্রহও হবে না। কিন্তু কোন অভিজ্ঞতাই ফেলনা নয়; আপনার যাত্রাপথে ছোটবড় সবরকম অভিজ্ঞতাই আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
চাকরির ক্ষেত্রে নম্র ও সহনশীল হলে আপনার জন্য হাজার রকম দরজা খুলে যাবে যা হয়ত কোনদিন ভেবেও দেখেননি। তাই আশা হারাবেন না, সুযোগ কাজে লাগান এবং উদ্দমের সাথে এগিয়ে চলুন। চাকরি হবেই!