প্রপার্টি

আপনার বাড়ি আগুন থেকে নিারপদ রাখুন

এটি ভয়াবহ চিন্তার বিষয় যে, আপনার ঘরে অগ্নিশিখা দাউদাউ করে জ্বলছে এবং আপনার প্রয়োজনীয় সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়েও ভয়ানক চিন্তা হল আপনার পরিবার এবং পোষা প্রাণী এমন দুর্ঘটনায় মারা যেতে পারে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা  প্রয়োজন ও বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রপার্টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নেওয়াঃ

আপনি যদি মাত্রই অনেকগুলো এপার্টমেন্ট, বাড়ি বা প্লট থেকে বেছে একটি কিনে থাকেন, তাহলে সেখানে উঠার আগে ভালোমত পেশাদার কাউকে দিয়ে যাচাই করে নেয়া উচিত।  এই পদক্ষেপ আপনাকে আপনার পরিবার বসবাস শুরু করার পূর্বে বড় ধরনের সমস্যা নির্দিষ্ট করতে সাহায্য করবে। আপনি স্থানীয় অগ্নি নির্বাপন অফিসে কথা বলতে পারেন আপনার ঘর আগুন নিয়ন্ত্রনে কতটুকু উপযোগী। সম্পত্তির মালিক হয়তো প্রয়োজন হলে নিজে থেকেই পরিবর্তন করবে কিন্তু আপনি যদি জায়গাটি ভাড়া নিয়ে থাকেন তাহলে আপনার উচিত ভুমি মালিককে সমস্যা গুলো সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা।

স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বিভাগের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করাঃ

স্থানীয় অগ্নি নির্বাপক বিভাগ সর্ম্পকে খোঁজ খবর নিয়ে নতুন বাসায় বসবাস শুরু করাই উত্তম। স্থানীয় অগ্নি বিভাগের নাম্বারটি আপনার জেনে রাখা উচিত। জরুরি নাম্বার ৯৯৯ নম্বরে ডায়াল কওে সাহায্য নেওয়া যায় কিন্তু স্থানীয় বিভাগ আপনার বিপদে খুব তাড়াতাড়ি পৌছে যেতে পারবে। আপনাকে এটাও খুঁজে বের করতে হবে যে অগ্নি বিভাগ এলার্ম পদ্ধতিতে কাজ করে কিনা। আপনি যদি সম্পত্তিটির প্রথম সুযোগ গ্রহিতা হোন তবে আপনার প্রতিবেশিদের নিকট থেকে জেনে নিন কিভাবে ফায়ার বিভাগকে খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়।

স্মোক ডিটেকটর এবং এলার্ম সিস্টেমঃ

প্রতিটি আবাসিক এলাকায় স্মোক ডিটেকটর বা ধোয়া সনাক্ত করার ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্যে নিয়মিত ব্যাটারি পরীক্ষা করা উচিত। কিছু স্মোক ডিটেকটর বাড়ির এলার্ম সিসটেমের সাথে যুক্ত থাকে আপনি সেটাও খুঁজতে পারেন। যখন আগুন লাগার ঘটনা ঘটে তখণ স্থানীয় ফায়ার বিভাগে এলার্ম সিসটেমের মাধ্যমে কল দিতে পারবেন। এটা শুধুমাত্র আপনি যখন কোন ফোনের মাধ্যমে সংযোগ পেতে ব্যর্থ হবেন তখনই না বরং আপনার অনুপস্থিতিতে বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়লেও ফায়ার বিভাগের যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে।

পরিকল্পনা তৈরি করুনঃ

আপনি আপনার বাসায় যত ধরনের অগ্নি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন না কেন আগুন যেকোনো সময় জ্বলে উঠতে পারে। অতএব, আপনার প্রয়োজন একটি পরিকল্পনা করা যা আপনাকে সংকটে পড়লে মূহুর্তে সাহায্য করবে। আপনার পরিবারের সাথে বসে এক্সিট গুলো কোথায় আছে তা বের করুন। যদি মানুষ জানালা দিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র বের করতে সক্ষম হয় তবে সে বিষয় নিয়ে কথা বলুন। যদিও সংকটময় অবস্থার মুখোমুখি হওয়া কঠিন, আপনি অবশ্যই আপনার বাচ্চাদের সাথে কথা বলুন অগ্নিকান্ডের সময় তারা তাদের কক্ষে আটকা পড়ে গেলে তাদের কি করা উচিত। পরিবারের সকল সদস্য এবং পোষা প্রাণীদের কিভাবে রক্ষা করা যায় এ ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন।

পানি এবং বৈদ্যুতিক সামগ্রীঃ

পানি ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সম্বন্বয় সম্পর্কে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। যেমন যদি আপনার বাড়ির ছাদ ফুটো থাকে এবং ক্রমাগত বিদ্যুতিক আউটলেটে পানি চুয়ে পড়ে তবে আপনি খুব তাড়াতাড়ি বিদ্যুতিক আগুনের মুখোমুখি হবেন। এই রকম পরিস্থিতির জন্যে সবসময় সচেতন থাকতে হবে এবং এ ধরনের কোন ঘটনা দেখার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ভালো হয় একজন ইলেকট্রেশিয়ানকে বাসায় ডেকে এনে এধরনের কোন সমস্যা কোথাও আছে কিনা তা সনাক্ত করাতে হবে।

রান্নার সময় সতর্কতাঃ

যখন আপনি রান্না করবেন তখন আগুন পরিপূর্ণভাবে জ্বলা শুরু করে। আপনাকে সবসময় চুলার উপর নজর রাখতে হয়।  চুলায় কোন পাত্র রাখবেন না, নিচতলা গেলে এবং পরে সন্ধ্যায় ফিরে এসে এটি চেক করবেন। নিশ্চিত হয়ে নিন অগ্নিশিখা যেন নিয়ন্ত্রনের বাইরে না যায়। ওভেন সর্ম্পকেও আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। যদি তৈলজাত পদার্থ ওভেনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তবে সেখানে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে এবং এ থেকে পুরো বাড়িতে অগ্নিকান্ডের কারণ হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। একভাবে যখন আপনি গ্রিল করবেন তখনও সাবধান হতে হবে।

রান্না শেষে সতর্কতাঃ

মাঝে মাঝে আপনি খাবার খাওয়ার জন্যে এমন উত্তেজিত হয়ে যান যে প্রয়োজনীয় সব কিছু বন্ধ করতে ভুলে যান। নিশ্চিত হন চুলার গ্যাস অথবা গ্রিল পরিপূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে এবং ওভেনও বন্ধ করা হয়েছে যা অগিকান্ড থেকে নিরাপদ থাকার চুড়ান্ত উপায়। যখন ঘর জুড়ে গ্যাস ছড়িয়ে পড়বে তখন কি করতে হবে সেটাও আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। উদাহরনস্বরূপ একটি বাতি জ্বালানোর মাধ্যমেও বিদ্যুত শক্তি এবং গ্যাস প্রজ্জলনের কারণ হতে পারে । আরো তথ্যের জন্যে আপনি আপনার স্থানীয় ফায়ার বিভাগের সাথে কথা বলতে পারেন।

জ্বলন্ত মোমবাতিঃ

জ্বলন্ত মোমবাতি যদিও অনেক নিরাপদ মনে হয় এবং আপনার লিভিং রুমকে আলাদা সৌন্দর্য্য দিতে পারে, কিন্তু এটি বাসস্থানে অগ্নিকান্ডের অন্যতম কারন হতে পারে। যখন আপনি মোমবাতি ব্যবহার করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে অগ্নিশিখা পুরোপুরিভাবে নির্বাপিত। অগ্নিশিখার উপর মোমবাতির কভার রেখে সাধারণভাবে আপনি অক্সিজেন নষ্ট করতে পারেন। জ্বলন্ত মোমবাতিকে অরক্ষিত রেখে কখনো কোথাও যাবেন না। জ্বলন্ত মোমবাতি আপনি আপনার পোষা প্রাণি ও ছেলে-মেয়েদের চারপাশে রাখবেন না। যেমন পোষা প্রাণির ক্ষেত্রে, এটি মোমবাতিকে ধাক্কা দিয়ে কার্পেটে ফেলে দিতে পারে আর তাতে আগুন জ্বলে উঠতে পারে। সবসময় মোমবাতিকে নিরাপদ রাখবেন এবং এগুলোকে একা রেখে কোথাও যাবেন না।

আবদ্ধ ঘিঞ্জি পরিস্কার করুনঃ

যদি আপনার বাড়িতে আগুন লেগে যায় আপনি চাইবেন যতদ্রুত সম্ভব এটি যেন নেভানো যায়। যদি আপনি এমন কোন জায়গা পান যা ব্যাপক আকারে প্রজ্জলিত হচ্ছে তবে এটির আগুন থেকে মুক্তি পেতে বের হওয়া অনেক কঠিন হবে। উদাহরণস্বরূপ একটি আলমারি যা বিভিন্ন বস্তু দ্বারা পূর্ণ সেটি অবশ্যই অগ্নিকান্ডের কারণ হবে। তাহলে আপনি আপনার ঐ আলমারির নিকট যান এবং আপনার অপ্রয়োজনীয় সব বস্তু আলমারি থেকে ফেলে দিন। যদিও এটি অনেক পরিশ্রমের কাজ তবুও এটি আপনাকে দীর্ঘজীবি করবে।

হিটিং ডিভাইসঃ

যখন বাতাসে নিম্ন আর্দ্রতা থাকে তখন হয়তো আপনি পোর্টেবল হিটার অথবা ফায়ারপ্লেস ব্যবহার করতে চাইবেন আপনার ঘর, এপার্টমেন্ট অথবা ফ্ল্যাটকে গরম রাখার জন্যে। আর যখন এ যন্ত্রগুলো পুরোপুরি ভাবে বাতাস থেকে ঠান্ডা দূর করে তখন এরা অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটাতে পারে। আপনার উচিত হবে নিরাপত্তার জন্যে পোর্টেবল হিটারকে চেক করা এবং যখন ঘুমাতে যাবেন তখন অথবা  সেখানে না থাকলে এটা কিভাকে বন্ধ করে দিতে হবে জানতে হবে। প্রত্যেক ঋতুর শেষে যখন এগুলো ফায়ার প্লেসে আসবে অবশ্যই তখন এদের পুরোপুরিভাবে দমন করতে হবে।

কুলিং ডিভাইসঃ

অনেকেই ঘর গরম করার ডিভাইসগুলো ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে জানলেও ঘর ঠান্ডা করার ডিভাইসও যে অনেক বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে সেটি অনুধাবন করতে পারেনা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রত্যেক ঋতুর শুরুতে এমনকি সারা বছর জুড়ে আপনাকে আপনার এয়ার কন্ডিশনার পরিস্কার করতে হয়। মিহি আঁশ, রোয়া এবং অন্যান্য আইটেম ইউনিটের সাথে আটকে যায় এবং এইগুলোই বিদ্যুতিক আগুনের সূত্রপাত ঘটায়। আপনার কুলিং ফ্যান চেক করা প্রয়োজন যেকোনো তার নষ্ট কি না এবং এটা নিশ্চিত হতে হবে যে তারগুলো আপনার পোষা প্রাণী কামড়াবেনা। ঠান্ডা প্রদানকারী যন্ত্রগুলো আপনার ঘর শুধু ঠান্ডা রাখে এটা মনে করলেই হবে না,  এগুলো আবার আগুনের সূত্রপাতও ঘটাতে পারে।

ফায়ার সেফটির মানে আপনাকে ঘাবড়ে দেয়া নয়। এর মূল কথা হল আপনি কিভাবে আপনার পরিবার এবং পোষা প্রাণীকে নিরাপদ রাখবেন তা দেখিয়ে দেয়া। আপনার নিকটবর্তী ফায়ার বিভাগের কোন কর্মকর্তার সাথে কথা বলার মাধ্যমেই আপনার থাকার জায়গার জন্য নির্দিষ্ট প্রয়োজনগুলো এবং এগুলো কিভাবে সন্বাক্ত করবেন তা সর্ম্পকে ভালোভাবে জানতে পারবেন।

Safety Services in DhakaSafety Services in Chattogram
Safety Services in Dhaka DivisionSafety Services in Khulna Division
Safety Services in SylhetSafety Services in Chattogram Division
Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close