বাংলাদেশের গবাদি পশুর মার্কেট ২০২২ | ইনফোগ্রাফিক
অনলাইনে কেনাকাটা আমাদের দেশে এখন নিত্য-নৈমত্তিক একটি ব্যাপার। দ্রুতগতি এবং সহজ ইন্টারনেটের ব্যবহার মানুষদের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনাকাটা করতে উৎসাহিত করেছে বহুগুণে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল গরুর হাট আয়োজনের পথিকৃৎ Bikroy.com-এ বছরও তার নিজস্ব ফ্ল্যাগশিপ ক্যাম্পেইন ‘বিরাট হাট‘ নিয়ে এসেছে। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইদানীং অনলাইন গরুর হাটের পসরা সাজিয়ে থাকে।
আজকের লেখায় আমরা Bikroy-থেকে প্রাপ্ত ২০২২ সালের ব্যবহারকারীদের ডাটার নিরিখে বাংলাদেশের গবাদি পশুর মার্কেটের ট্রেন্ডগুলো বিশ্লেষণ করে দেখবো এবং দেশের বাজারে গবাদি পশুর দাম সম্পর্কে আলোচনা করবো।
কোন শহরগুলো থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গবাদি পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়?
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাধারণত গবাদি পশুর মার্কেটে বিজ্ঞাপনের হার বৃদ্ধি পায়। ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল অবস্থান হওয়ার দরুন স্বাভাবিক ভাবেই বেশিরভাগ পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন এখান থেকে পোস্ট করা হয়েছে। ঢাকা থেকে এ বছর ৩১% বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেক খামারিরা ঈদের মৌসুমে বিক্রির উদ্দেশ্যে তাদের গবাদি পশু ঢাকায় নিয়ে আসেন।
গবাদি পশুর লিস্টিং-এ ২২% জায়গা নিয়ে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। পরেই রয়েছে রাজশাহী, খুলনা, এবং সিলেট যথাক্রমে ১৬%, ১০%, ও ৯% জায়গা নিয়ে রয়েছে।
তালিকার নিচের অংশে অর্থাৎ রংপুর, ময়মনসিংহ এবং বরিশাল থেকে এসেছে যথাক্রমে ৫%, ৪% এবং ৩% বিজ্ঞাপন।
গবাদি পশু কেনার পেছনে ব্যয় কেমন?
গবাদি পশুর মার্কেট তুলনামূলকভাবে ঈদের মৌসুমে বেশ রমরমা অবস্থাতেই থাকে। অনেকেই কোরবানির জন্য ভালোমানের গবাদি পশু কেনার জন্য সারা বছর সঞ্চয় করে থাকেন।
Bikroy-এ, অর্ধেকেরও বেশি (৫২%) গবাদি পশুর লিস্টিং ১ লক্ষ – ৫ লক্ষ টাকা মূল্য পরিসীমার মধ্যে। যা মূলত গবাদি পশুর মার্কেটের গড় মূল্য।
অন্যদিকে, ২৩% গবাদি পশুর দাম ৫০ হাজার টাকার নিচে। এই তালিকায় বেশিরভাগই রয়েছে ছাগল – যা বাংলাদেশে কোরবানির পশু হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। গরুর তুলনায় রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হওয়ায় অনেকেই কোরবানির জন্য ছাগল কিনতে পছন্দ করেন।
২১% গবাদি পশুর লিস্টিং ৫০,০০০ থেকে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে। এই পরিসীমার মধ্যে প্রিমিয়াম মানের ছাগল এবং ছোট আকারের গরু রয়েছে। অবশিষ্ট ৪% লিস্টিং রয়েছে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরিতে যা মূলত ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে।
পোস্টকৃত গবাদি পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন এবং বিক্রির হার
দীর্ঘদিন ধরে হাজারো গবাদি পশু বিক্রেতা আমাদের সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। ২০১৭ সালে কোরবানির সময় পোস্ট হওয়া গবাদি পশুর সংখ্যা ছিলো ৫,৪২০ টি যা থেকে বিক্রি হয়েছিলো ১,৫৪৪ টি পশু। ২০১৮ সালে কোরবানির সময় পোস্ট করা হয়েছিলো ৭,২৪৬ টি বিজ্ঞাপন এবং বিক্রি হয়েছিলো ২,২৯৩ টি পশু। ২০১৯ সালে ৯,৩৩১ টি বিজ্ঞাপনের মধ্যে বিক্রি হয়েছিলো ২,৮৮৯ টি পশু।
শাটডাউন এবং করোনা পরিস্থিতির জন্য ২০২০ সালে বাজার কিছুটা নিম্নমুখী ছিলো যেখানে ৮,০৭০ টি বিজ্ঞাপন থেকে বিক্রি হয়েছে ২,০৮৫ টি পশু। অন্যদিকে ২০২১ সালে বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়েছে ৮,১৪৭ টি এবং যার মধ্যে, প্রায় ১,৩২০ টি পশু বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২২ সালে এই পোস্টের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। পোস্টকৃত ৮,৬৫২ টি বিজ্ঞাপনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১,৭৫৪ টি পশু বিক্রি হয়েছে।
কেনার ক্ষেত্রে কোন ধরণের গবাদি পশু এগিয়ে?
আমাদের দেশে গরুর মাংস জনপ্রিয়, সুস্বাদু, এবং তুলনামূলক সস্তা হওয়ার দরুন অনেকেই পছন্দ করে থাকেন, যার ফলস্বরূপ সমগ্র বিজ্ঞাপনের ৬৯%-ই গরুর বিজ্ঞাপন।
Bikroy-এ গরুর বিজ্ঞাপন ছাগলের বিজ্ঞাপনের প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, Birkoy-এ সর্বমোট গবাদি পশুর মধ্যে গরুর বিজ্ঞাপন আছে ৬৯% এবং ছাগলের বিজ্ঞাপন আছে ৩১% এবং এই সংখ্যা ক্রমশ উর্ধমুখী।
শেষকথা
আমাদের দেশে বর্তমানে অনলাইন গরুর হাটের জনপ্রিয়তা ও প্রয়োজনীয়তা দুটোই বাড়ছে। সুতরাং, আপনি যদি অনলাইন গরুর হাট বা সরাসরি হাট থেকে কোরবানির পশু কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে গবাদি পশু কেনার উপায়গুলো সম্পর্কে সচেতন ও নিশ্চিত হয়ে নিন।
আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সবাইকে আগাম ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা।