চট্টগ্রামে চাকুরির বাজারের হালচাল
বাংলাদেশ অবশেষে বৈশ্বিক স্বীকৃতির স্তরে পৌঁছেছে এবং অর্থনৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে ক্রমশই অভিন্ন লক্ষ্য ও কর্মপ্রক্রিয়ার কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বহু দশক ধরেই চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রধান বন্দর নগরী হিসেবে বহাল রয়েছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অনেক মানুষের জন্য ভালো বেতনসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এসেছে। বার্জার, টাগবোট এবং কার্গো কন্টেইনার তৈরি ও ভাঙ্গার কাজে ব্যবহৃত টাওবোট ইত্যাদিতে গভীর সমুদ্রের নাবিক এবং ডক শ্রমিক হিসেবে সবসময়ই কাজ পাওয়া যায়। যদিও বন্দর এলাকায় সবসময়ই বিভিন্ন চাকুরি মেলে এবং কাস্টমসের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন পদ খালি থাকে, তবুও ইদানিং সমগ্র চট্টগ্রামজুড়েই বিভিন্ন ধরনের চাকুরির সুযোগ রয়েছে।
শিক্ষা ও প্রস্তুতি
বেশিরভাগ সফল চাকুরিসন্ধানী মৌলিক দু’টি অস্ত্র ব্যবহার করে সফল হয়েছেন। হয় তারা তাদের সম্প্রতি অর্জিত শিক্ষার উপর নির্ভর করেন অথবা তারা তাদের ব্যাপক অভিজ্ঞতা দিয়ে নিয়োগদাতাকে চমৎকৃত করতে পারেন। যেহেতু একজন উচ্চাকাঙ্খী প্রার্থীর জন্য পুঁথিগত জ্ঞান আর বাস্তব অভিজ্ঞতা উভয়টিই সমান মূল্যবান সম্পদ, তাই নিয়োগকর্তারা সম্ভ্যাব্য প্রার্থীকে মূল্যায়ন করার সময় উভয়টিই বিবেচনা করে থাকেন। প্রার্থীরা সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া চলাকালীন তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলার সুযোগ পাবেন। তাদের উচিত তাদের অর্জিত শিক্ষার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক যেমন: কোর্স ওয়ার্ক ও অ্যাসাইনমেন্টের মত যে সব বিষয় তাদেরকে কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযুক্ত করে গড়ে তুলেছে সে সব দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা। যেসব প্রার্থীর এক বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা নতুন কাজের জায়গায় কীভাবে কোনো সম্ভ্যাব্য সমস্যা মোকাবেলা করবেন সে সম্পর্কে অতীতের সমজাতীয় ঘটনার আলোকে সুনির্দিষ্ট চিত্র তুলে ধরতে পারেন।
কায়িক শ্রম এবং উৎপাদন
চট্টগ্রামের অনেক চাকুরিপ্রার্থী এমন কিছু বিশেষ দক্ষতার উপর নির্ভর করেন যা তারা কোনো একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে শিখেছেন। কিছু কিছু কোম্পানীতে যোগ্য প্রার্থীদের জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, উৎপাদন এবং ড্রাইভিং পেশায় চাকুরির সুযোগ থাকে। শিপইয়ার্ড, তেল কোম্পানী এবং চা প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প হলো দেশজুড়ে দক্ষ শ্রমিকের মূল নিয়োগদাতা এবং তারা বাংলাদেশে নবিসী পর্যায়ের বিভিন্ন ধরনের চাকুরি প্রদান করে থাকে। পদ্মা অয়েল কোম্পানী, মেঘনা পেট্রোলিয়াম এবং ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড মাঝে মাঝেই মাঠ পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ করে থাকে, যেখান থেকে ধীরে ধীরে পদন্নোতির মাধ্যমে কোম্পানীর উঁচু পদে আসীন হওয়া সম্ভব। চাকুরিতে বহাল থেকে একইসঙ্গে কাজ ও পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া যায়, তাই আজকের কোনো মাঠকর্মী অদূর ভবিষ্যতে হিসাবরক্ষক পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
নির্বাহী পদ
চট্টগ্রামে বিজ্ঞাপন ও বিপণন খাতের চাকুরিও ক্রমবর্ধমান। যোগ্যতাসম্পন্ন সব ব্যবসায়িক প্রধানেরা উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াজাতকরণের মান বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মীদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন। উদ্যোগী ব্যবসায়িক নির্বাহীগণ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রয়োজন ও উন্নত বাজার ব্যবস্থার জন্য সবসময়ই বিভিন্ন কর্পোরেশন এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে চলেছেন। এইসব উদ্যোক্তা প্রচলিত বাজারে এই মূহুর্তে যেসব জিনিসের অভাব রয়েছে সেসবের ভিত্তিতে নতুন নতুন পণ্য ও পরিষেবা উদ্ভাবন করে সফল হচ্ছেন। দু’একটি মৌলিক উপায় অবলম্বন করে এদেশে অথবা অন্যত্র নির্বাহী পর্যায়ের চাকুরি পাওয়া যেতে পারে। শুরুতে কেউ কেউ নেতৃত্বশীল দলে অথবা সাংগঠনিক পরিচালনা পর্ষদে কোনো একটি পদে নিযুক্ত হতে পারেন। সম্ভবতঃ তারা ভাগ্যবান উত্তরাধিকারী হিসেবে পারিবারিক ব্যবসার অংশীদার হয়েছেন, অথবা সম্ভবতঃ তারাই ছিলেন সেই কোম্পানীর প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা। প্রাথমিক স্তরের কোনো কর্মীও তার কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠার জোরে এই ধরনের উচ্চপদে বহাল হতে পারেন। কোনো একজন ব্যক্তি কোনো কোম্পানীতে সাধারণ শ্রমিক, উৎপাদন সহকারী অথবা প্রশাসনিক সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে শেষপর্যন্ত বহুকাঙ্খিত কর্পোরেট স্তরে পৌঁছে যেতে পারেন।
প্রশাসনিক ও সহযোগী পর্যায়ের কাজ
চট্টগ্রামে অফিসের চাকুরিগুলো হলো প্রধানতঃ ক্রমবিকাশমান উন্মুক্ত পদ। বাংলাদেশে গ্রাহক পরিষেবা কল সেন্টার, টেকনিক্যাল সাপোর্ট হেল্প ডেস্ক এবং ফোনভিত্তিক অনেক সংস্থা তাদের নতুন নতুন শাখা খুলছে। এইসব অফিসের প্রাঙ্গণে এবং অন্যান্য খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রের বিভিন্ন স্তরে প্রশাসনিক সহকারির পদে লোক দরকার হয়। ভবনের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে নির্মাণ প্রকৌশলীর প্রয়োজন হয় অথবা সমগ্র ভবনের পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃব্যবস্থা ঠিক রাখতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর প্রয়োজন হয়। কর্মচারী ও অতিথিদের জন্য ভবনকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে মালি এবং পরিচর্যাকারীর প্রয়োজন হয়। যে কোনো প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনার জাটিল এক অংশ হলো প্রশাসনিক চাকুরি।
বিশেষায়িত চাকুরিক্ষেত্র
অর্থব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্য শাখা থেকে পড়াশুনা শেষ করেছেন এমন ব্যক্তির জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বেসরকারি হিসাবরক্ষণ অফিসের চাকুরি দিয়ে পেশাজীবন শুরু করাটা দারুণ ব্যাপার হতে পারে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিই সরকার কর্তৃক প্রণীত সমন্বিত আইন ও বিধিমালা দ্বারা পরিচালিত হয়। তদুপরি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ অনুসারে অথবা তদাপেক্ষা বেশি গ্রহণযোগ্য উপায়ে নিজস্ব কর্মবিধি তৈরি করে নেয়। যারা অর্থব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চাকুরি খুঁজছেন তাদেরকে অবশ্যই আইনগত বিষয়গুলো পরিপূর্ণভাবে বুঝে নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো আইন ভঙ্গের কারণে অথবা বিশেষ কোনো বিধি মানতে অপারগ হওয়ার কারনে ভোগান্তি পোহাতে না হয়। দৃশ্যতঃ চট্টগ্রামের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঊর্ধ্বগতি চলছে এবং এটা নগরজুড়ে অনেক নতুন কর্মসংস্থানের ইঙ্গিত দেয়। কোম্পানীগুলো ড্রাইভিংয়ের চাকুরি থেকে নিয়ে অফিসের চাকুরি পর্যন্ত সকল স্তরে নিয়োগ প্রদান করে চলেছে এবং যোগ্য প্রার্থীরা প্রায়ই আলোচনা সাপেক্ষে নিজেদের বেতন নির্ধারণ করে নিতে পারছেন। সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের জন্য আলোচনা সাপেক্ষে মজুরি নির্ধারণ যদিও সবসময় সুলভ নয়, তবুও চট্টগ্রামে চাকুরির প্রাপ্যতা দ্রুতই শীর্ষবিন্দু স্পর্শ করতে যাচ্ছে। নতুন নতুন ব্যবসার সুযোগ যত বাড়বে কর্মীর চাহিদাও ততই বাড়বে।