বাংলাদেশের মোবাইল মার্কেট, ২০১৯ | ইনফোগ্রাফিক
বাসা থেকে বের হয়ে কখনও কি হুট করে এমন মনে হয়েছে যে আপনি ভুলে কিছু একটা রেখে এসেছেন? আপনার ব্যাগ আর পকেট তন্ন তন্ন করে খুঁজে হয়রান হয়েছেন, কিন্তু কোথাও সেটা খুঁজে পান নি। আর ঠিক তখনই আপনার কাছে মনে হয়েছে যে ঐ একটি জিনিস ছাড়া আপনার জীবন বলতে গেলে অচল। সত্যিই তো, আমাদের মহামূল্যবান মোবাইল ফোনগুলো যদি না থাকতো, তাহলে হয়ত বাস্তবতা থেকে আমরা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতাম। বৈশ্বিক যোগাযোগের অতুলনীয় ক্ষমতা বলতে গেলে এখন আমাদের সবারই আঙুলের ডগায় চলে এসেছে, আর মূলত সেই ক্ষমতার প্রতিদানেই আমরা এই ছোট্ট ডিভাইসগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে গেছি। আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা রকম দিক এই স্মার্টফোন প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল – ব্যবসা ও বাণিজ্য, শিক্ষা, খাদ্য, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন সহ আরো কত কি। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টান্তের এই নতুন মোড় নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল ফোনের মার্কেটে আসা পরিবর্তনগুলো নিয়ে তাই জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। একই সাথে গ্রাহকরাও আবার প্রতি বছর তাদের ফোনগুলোতে ভিন্ন ও নতুন কিছু পেতে চান। আজ আমরা Bikroy -এর ২০১৯ সালের ইউজার ডাটার ভিত্তিতে বাংলাদেশের মোবাইল মার্কেটে তৈরি হওয়া ট্রেন্ডগুলো বিশ্লেষণ করে দেখবো এবং সেগুলোর কিছু দিক নিয়ে পর্যালোচনা করবো।
ব্যবহারকারীরা ঠিক কি খুঁজছেন?
আমাদের সার্চ ডাটাগুলো এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায় যে বর্তমানে গ্রাহকদের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হলো শাওমি। ইদানিং শাওমি বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের মার্কেটে বেশ জনপ্রিয় একটি নাম হয়ে উঠেছে। কারণ তারা তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে বেশ ভালো স্পেসিফিকেশনের ফোন আমাদের উপহার দিয়েছে, বিশেষ করে তাদের রেডমি সিরিজটি। স্বাভাবিকভাবে অল্প বাজেটে একজন ব্যক্তি এই ফোন কিনে প্রায় ৪-৫ বছর পর্যন্ত দারুণ সার্ভিস পেতে পারেন। এই চাইনিজ স্মার্টফোনগুলোতে আপনারা পাচ্ছেন বিভিন্ন রকম মডেল, আকর্ষণীয় ক্যামেরার অপশন, স্টাইলিশ ও নজরকাড়া রঙের বডি, আর সেই সাথে মোটামুটি ভালো ধাঁচের গেমিং সফটওয়্যার। আর এভাবেই তারা মার্কেটের একটা বড় অংশ জুড়ে অবস্থান নিয়ে ফেলেছে।
শাওমির পর অনলাইনে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা ফোনগুলো হলো স্যামসাং এবং আইফোন। যদিও এই ব্র্যান্ডগুলো মূলত বিলাসবহুল ও দামী ফোনের জন্য বিখ্যাত, তবুও স্যামসাং কোম্পানি তাদের বেশ কিছু সাশ্রয়ী দামের ফোনে কিছুটা ভালো স্পেসিফিকেশন দিয়ে থাকে। আর যদি অ্যাপলের কথা বলতে যাই, তাহলে বেশ কিছু আস্থাবান গ্রাহক প্রায় যেকোনো সময় তাদের আইফোনের পেছনে অর্থ ব্যয় করতে রাজি। বাংলাদেশে আইফোনের ব্যাপক জনপ্রিয়তার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এদের দুর্দান্ত ক্যামেরা স্পেসিফিকেশন এবং সামগ্রিকভাবে এর প্রিমিয়াম অনুভব।
এরপরেই আসে নোকিয়া, হুয়াওয়ে, ভিভো এবং অপ্পোর নাম। এই ফোনগুলোও মানুষের সার্চের তালিকায় বেশ জোরালো অবস্থানে রয়েছে, কিন্তু তারপরও উপরে উল্লেখিত ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় এদের সার্চ ডাটা অনেকটাই কম। যদিও বেশ লম্বা সময় পর ফিরে আসা চিরাচরিত নোকিয়া নতুন রূপে ও আঙ্গিকে স্মার্টফোনের দুনিয়ায় পা রেখেছে। তবুও এই কোম্পানিটি এখনও ততটা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিতে পারেনি, যতটা তারা ফিচার ফোনের মার্কেটে তাদের স্বর্ণযুগের সময় পেরেছিলো।
বেশির ভাগ ফোন কোথায় বিক্রি হচ্ছে?
এই পর্যায়ে আমরা মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন পোস্ট হয় যেসব এলাকা থেকে, সেই এলাকাগুলোর ভৌগলিক অবস্থান দেখবো। এই ডাটা অনুযায়ী অনলাইনে পোস্ট হওয়া বিজ্ঞাপনের অর্ধেকেরও বেশি করা হয় ঢাকা থেকে। আমাদের রাজধানী এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা ও শিক্ষার এক প্রাণকেন্দ্র হওয়ার দরুণ দেশের যেকোনো এলাকার তুলনায় ঢাকাতেই যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মোবাইল ফোন বেচা-কেনা হবে, এমনটাই আসলে স্বাভাবিক। মোবাইল ফোন বিক্রির ক্ষেত্রে এর পরই সবচেয়ে দাপুটে শহরের নাম হচ্ছে চট্টগ্রাম। Bikroy -এ পোস্ট হওয়া বিজ্ঞাপনের প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ এই শহরের দখলে।
Bikroy -এ মোবাইল ফোনের টপ ব্র্যান্ড
আমাদের সাইটে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হওয়া মোবাইল ফোনগুলোর তালিকায় এখন রাজত্ব করছে স্যামসাং, তার পর পরই রয়েছে সিম্ফনি, শাওমি, অ্যাপল এবং নোকিয়া। মোবাইল ফোনের মার্কেটে স্যামসাং বেশ লম্বা একটা ধরে তার ঘাঁটি ধরে রেখেছে এবং তাদের বিশ্বস্ত কাস্টমার বেইজদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য ধারাবাহিকভাবে উচ্চমান ও কোয়ালিটি সম্পন্ন ফোন উপহার দিয়ে আসছে। কিন্তু বলাই বাহুল্য, মোবাইল ফোনের মার্কেট যথেষ্ট প্রগতিশীল। কেননা শাওমি ও সিম্ফনির মত ব্র্যান্ডগুলো গ্রাহকদের স্যামসাং ফোনের সাশ্রয়ী বিকল্প তৈরি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে অ্যাপল আর নোকিয়ার গ্রাহক সংখ্যা কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকার কারণে তারা কিছুটা পিছিয়ে পরেছে। তবে এই বছরে তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলো ঘোষণা হওয়ার পর আশা করা যাচ্ছে যে মার্কেটে তাদের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
অ্যান্ড্রয়েড বনাম আইওএস বনাম ফিচার
বর্তমানে বাজারের বেশির ভাগ ফোন হয় অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইওএস প্ল্যাটফর্ম দিয়ে চলে। বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের মার্কেটে অ্যান্ড্রয়েড প্রায় ৭০% জায়গা দখল করে রাজত্ব করছে, কেননা এটি গ্রাহকদের সীমাহীন কাস্টমাইজেশন করার সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি এর প্রায় সবগুলো মোবাইল ফোন নির্মাতারাই এই প্ল্যাটফর্মের ফোন বানিয়ে থাকেন। আর এভাবেই বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনের ইন্ডাস্ট্রিতে এটি একটি প্রভাবশালী অবস্থানে আছে।
আমাদের সময়ে অ্যান্ড্রয়েড বনাম আইওএস ফরম্যাটের লড়াই অনেকটাই নব্বই এর দশকের শুরুর দিকের উইন্ডোজ বনাম ম্যাক ফরম্যাটের রেষারেষির কথা মনে করিয়ে দেয়। অ্যাপল মূলত তাদের ‘ক্লোজড সিস্টেমের’ জন্য সুপরিচিত, যেখানে তারা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয় করার মাধ্যমে এক অনন্য অভিজ্ঞতা তৈরি করে থাকেন, যা তাদের বিশ্বস্ত গ্রাহকদের ভালোবাসার দাবিদার। কিন্তু এটি বেশ জটিল ও অনমনীয় একটি কম্বিনেশন, আর তাই অনেক টেক অনুরাগীরা এই কঠোর স্বভাবের ডিভাইসটি ব্যবহার করতে চান না। যাই হোক, এদেশে মোবাইল প্ল্যাটফর্মের এক আকর্ষণীয় ১০% শেয়ার শুধুমাত্র একটি ব্র্যান্ডের নামে নিয়ে এসেছে আইওএস, যা অ্যাপলের জন্য নিঃসন্দেহে সুখবর।
আবার অনেকেই হয়ত ভেবেছেন যে ফিচার ফোন প্ল্যাটফর্মগুলো ইতোমধ্যে ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আমাদের সার্চ ডাটা দেখে মনে হচ্ছে যে এরা আরো বেশ কিছুদিন বাজারে থাকবে, কেননা স্মার্টফোনের বিপরীতে এরা এক দারুণ কম দামী বিকল্প।
মূল্য সীমা
আমাদের ডাটা অনযায়ী, Bikroy -এ থাকা বেশির ভাগ ফোনের দামই ৫ হাজার টাকার মধ্যে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যেও বিপুল সংখ্যক ফোনের বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়। Bikroy -এ পোস্ট হওয়া বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে সিংহভাগই সাশ্রয়ী দামের হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে যে বেশির ভাগ ব্যবহৃত ফোনের রি-সেল ভ্যালু অনেক কম হয়, আর আমাদের সাইটে ব্যবহৃত ফোনের বিজ্ঞাপনই সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে ব্র্যান্ডগুলো বাজেট ফোন বাজারে নিয়ে আসছে, এটাও একটা প্রধান কারণ।
তাছাড়া আজকাল মোবাইল ফোনের সবচেয়ে বেসিক ফিচারগুলো প্রায় সব ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেই একই রকম হয়। গ্রাহকরা সেজন্য ফোন পছন্দ করার সময় এর ডিজাইন এবং পছন্দের ব্র্যান্ডের মূল্যমান সাপেক্ষে সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্পেসিফিকেশন পাওয়া যায় এমন ফোন বেছে নেন। আর এভাবেই মোবাইল ফোনের ইন্ডাস্ট্রিতে লক্ষণীয় মাত্রায় দামের বৈচিত্র তৈরি হয়েছে।
নতুন মোবাইল বনাম ব্যবহৃত মোবাইল
সাম্প্রতিক ডাটা অনুযায়ী, Birkoy -এ প্রতি মাসে প্রায় ১,৫০,০০০ মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হচ্ছে। কিছুটা উনিশ বিশ হওয়া সত্ত্বেও ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে বিক্রি হওয়া মোবাইল ফোনের সংখ্যা সামগ্রিকভাবে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের ধরণ এবং পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, Bikroy -এর বিজ্ঞাপন ভান্ডারে ব্যবহৃত ফোনের বিজ্ঞাপনই সবচেয়ে বেশি দাপট নিয়ে থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের একদম নতুন ফোনের বিজ্ঞাপনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং তাও প্রায় ২০% দ্রুত গতিতে।
শেষকথা
সর্বোপরি, বাংলাদেশে ২০১৯ সালের মোবাইল ফোনের মার্কেটের পরিস্থিতির এক ঝলক আজ আমরা দেখলাম। সব সময়ের মতই প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে এই মার্কেটটিও অবিরাম বিবর্তিত হচ্ছে। এক বছর যেতে না যেতেই গ্রাহকরা ভালো থেকে আরো ভালো অফার পাচ্ছেন। আর মার্কেটে বড় ব্র্যান্ডগুলোকে পাশ কাটিয়ে সাশ্রয়ী ও সহনীয় দামের ফোনগুলো দিন দিন আরো প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। তুলনামূলক দামী ও উচ্চ মানের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অনেকেই তাদের নিজ নিজ ধরণ অনুযায়ী গ্রাহক বেইজের কাছে পণ্য বিক্রি করতে চাইবেন, আবার কিছু ব্র্যান্ড হয়ত চেষ্টা করবে বাজেট ফোন তৈরি করার মাধ্যমে সহনীয় দামের শ্রেণীতে পা রাখতে। ক্ষেত্র যেমনই হোক না কেন, মোবাইল ফোনের মার্কেট এখন আরো দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে, আর এখন অনলাইনে একটি মোবাইল ফোন কেনা আগের চেয়েও অনেক সহজ হয়ে গেছে। কেননা Bikroy -এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলো রয়েছে আপনাদের পাশে। তাই আপনি যদি একটি মোবাইল ফোন কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোনে আকর্ষণীয় সব ডিলস পেতে আজই ভিজিট করুন Bikroy.com-এ!
সম্পূর্ণ ইনফোগ্রাফিকটি দেখুনঃ