ভাড়া বাসা সাজানো | নিজের মতো গড়ে নিতে মাথায় রাখুন ৪টি বিষয়
কর্মব্যস্ত দিন শেষে প্রতিটি মানুষই ক্লান্তি-অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে ফিরে আসে তার শান্তির নীড়ে। যেখানে সে বিশ্রাম নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ও নিজেকে প্রস্তুত করে পরবর্তী দিনের জন্য। জীবনের তাগিদে চাকরি, ব্যবসা কিংবা বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য অনেক পরিবারকেই শেকড় থেকে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। কিন্তু অন্যের বানানো বাড়িতে এত নিষেধাজ্ঞা আর নিয়ম-কানুনে নিজের মনের মতো করে কি আর থাকা যায়? ভাড়া বাসা সাজানো নিয়ে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া দ্বন্দ্ব কম-বেশি লেগেই থাকে। অথচ নিজের সুবিধা মতো সাজানো বাসা না হলে তা বসবাসের উপযোগী হয় না। চলুন তবে দেখে নেই মনের মতো কীভাবে ভাড়া বাসা সাজানো যায়!
ভাড়া বাসা সাজানো নিয়ে চমৎকার কিছু টিপস
ইটের পর ইট গেঁথে চার দেয়ালের এক কাঠামো তৈরি করে নিলেই তা বসবাসের যোগ্য হয় না। যান্ত্রিক এই জীবনে মনের মতো বাসা সাজানো না হলে সেই কাঠামো যেন মনে হয় জেলখানা সদৃশ। আয়তনে যেমনই হোক নিজের ব্যক্তিত্বের সাথে মিল রেখে ভাড়া বাসা সাজানোয় আলাদা ধরণের তৃপ্তি পাওয়া যায়। আজ আমরা ভাড়া বাসা সাজানো নিয়ে এমন কিছু টিপস শেয়ার করবো, যেগুলো আপনাকে বাড়িওয়ালার সাথে দ্বন্দ্ব থেকেও বাঁচাবে আর আপনি থাকতে পারবেন নির্ঝঞ্ঝাট। ভাড়া বাসা সাজানো যখন মুখ্য তখন বিবেচনায় আনতে হবে ৪টি বিষয়। সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১. আলো-ছায়ার খেলা বা লাইটিং সিস্টেম
আজকাল বাড়িগুলো এতই কাছাকাছি গড়ে উঠেছে যে ঘরের ভেতর প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশে ব্যাহত হয়। এমন অন্ধকার ঘরে সারাক্ষণ আমাদের নির্ভর করতে হয় ঐ ইলেক্ট্রিক বাল্ব-এর উপরেই। আর যদি আপনি বাজেটের মধ্যে ভালো বাসা ভাড়া করতে পারেন, তখনো লাইটিং-এর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুন।
ঘরে শুধু টিউব লাইট লাগিয়ে নান্দনিকতার ছোঁয়া পাবেন না। আলো-ছায়া ফুটিয়ে তুলে আপনি নিমিষেই পরিবর্তন করে দিতে পারেন ঘরের পরিবেশ। তাছাড়া ঘরের ভেতর উজ্জ্বল আলো ও কম আলো দুটিই প্রয়োজন। কেননা আপনি যখন কোনো কাজ করবেন, তখন আপনার উজ্জ্বল আলোর প্রয়োজন হয়। আর যদি রিল্যাক্স করতে চান, নিঃসন্দেহে তখন অল্প আলোতেই ভালো লাগবে। আবার ঘরে বিভিন্ন ল্যাম্প শেড-এর অবস্থান আপনার রুচিশীল ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিবে। টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প ও ফেইরি লাইটের আলো-ছায়ার খেলা মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। বাহারি সুন্দর ল্যাম্প শেড খুঁজে পাবেন হোম ডেকর-এর শো-রুমগুলোয় আর কম দামে খুঁজে থাকলে ঢাকার নিউ মার্কেটে খুঁজে পাবেন। তাছাড়া দেশীয় ধাঁচে নতুনত্ব ও আধুনিকতার মিশেল চাইলে ল্যাম্প শেড খুঁজতে ঢুঁ মারতে পারেন দেশী ফ্যাশন হাউসগুলোয়।
২. ফার্নিশিং- এ ফুটিয়ে তুলুন আভিজাত্য
ভাড়া বাসা সাজানো মানেই সফট ফার্নিশিং-এর ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। একঘেয়ে বোরিং ফার্নিচার-এর পরিবর্তে সফট ফার্নিশিং করে সহজেই আপনার বাসার চেহারা পাল্টে নিতে পারেন। আপনার পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী জানালার পর্দা বা চিক, বেড কভার, টেবিল রানার, সোফা-বিছানার কুশন কভার ইত্যাদি গৃহের সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা করবে। আর ফ্লোরে শতরঞ্জির ব্যবহার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবে। জানালা ও দরজায় পর্দার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলতে ব্যবহার করতে পারেন কার্টেন হোল্ডার, যা আপনার ঘরকে দিবে আভিজাত্যের ছোঁয়া। ভাড়া বাসা সাজানো বা গোছানোতে যদি আপনি খুব সিম্পল ফার্নিশিং পছন্দ করেন তবে সম্পূর্ণ ফ্ল্যাট-এ এক কালারের পর্দা ব্যবহার করুন। আর আপনি যদি কালারফুল পরিবেশ পছন্দ করেন তবে পুরো বাসায় কালারফুল প্রিন্টের পর্দা অথবা এক এক ঘরে এক এক কালারের পর্দা ব্যবহার করে সাদামাটা ঘরটিকে নিমিষেই রঙিন করে তুলতে পারেন।
৩. ইনডোর প্ল্যান্টস-এ সতেজতার আমেজ
শহুরে রুদ্ধ পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ কেমন যেন যেন নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। জীবনের সজীবতা ফিরে পেতে তাই ঘরের এক কোণে রাখুন সবুজ সতেজ গাছ। ইনডোর প্ল্যান্টস দিয়ে আপনি বারান্দা বাগানও করে নিতে পারেন। বিভিন্ন ফুল গাছ আর টবে হয় এমন কিছু সবজির চাষও করতে পারেন। সকাল-বিকেল গাছের যত্ন নিলে আপনার মনও প্রফুল্ল থাকবে। আর যদি অল্প যত্নের গাছ খুঁজে থাকেন তাহলে সহজেই ইরিকা পাম, স্নেক প্ল্যান্ট, ইঞ্চি প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট এগুলোর মধ্য থেকে বেছে নিতে পারেন। ঘরের কোণে এক টুকরো সবুজ আপনার গৃহে এনে দিবে প্রশান্তির ছোঁয়া। উল্লেখ্য যে, স্নেক প্ল্যান্ট অন্যান্য যেকোনো গাছের চেয়ে ১০% বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। সুতরাং ইনডোর প্ল্যান্টস ভাড়া বাসা সাজানো ছাড়াও সুস্থতার জন্যও যে কতটা উপকারী আশা করি তা আর বুঝিয়ে বলতে হবে না।
৪. দেয়াল বলবে মনের কথা
আপনার ভাড়া বাসা সাজানো নিয়ে বাড়িওয়ালার সাথে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হয় দেয়াল সাজাতে গিয়ে। অনেক বাড়িওয়ালা দেয়ালে পেরেক ঠোকা একেবারেই পছন্দ করেন না। তাহলে ওয়াল ডেকোরেশনে কী করতে পারি? খালি দেয়াল যে বড্ড বেমানান লাগে! মন খারাপের কিছু নেই। দেয়ালে পেরেক না ঠুকেও আপনি সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার দেয়াল। চলুন জেনে নেই কীভাবে-
- বাজারে এখন অনেক সুন্দর সুন্দর ওয়াল স্টিকার পাওয়া যায়। ভাড়া বাসা সাজানো লক্ষ্যে আপনার পছন্দ মতো ছোট, বড়ো, মাঝারি যেকোনো সাইজের ওয়াল স্টিকার লাগিয়ে বেশ আকর্ষনীয় করে তুলতে পারেন সাদাসিধে দেয়ালটি।
- ওয়াল ডেকোরেশনের জন্য আরেকটি উপায় হতে পারে বিভিন্ন সাইজের স্ট্যান্ড শেলফ যাতে বিভিন্ন শো-পিস,পারিবারিক ফটোফ্রেম ও ইনডোর প্ল্যান্টস সাজিয়ে রাখতে পারেন। দেখবেন ঘরের শোভা বেড়ে যাবে বহুগুণ! তাছাড়া যে সব শেলফ লম্বায় ছোট আর প্রস্থে বড়ো, তাতে আপনি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বিভিন্ন ওয়াল ম্যাটও সাজিয়ে রাখতে পারেন।
- দেয়ালে আয়না থাকলে সে বাসাটি আরও বড় বলে মনে হয়। আয়না মানেই যে দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে হবে তা নয়। দেয়ালে খুব সিম্পল একটা বড় আয়না দাঁড় করিয়ে দিলে কিন্তু বেশ গর্জিয়াস হবে! তবে দেয়ালে যদি পেরেক ঠুকতেই হয় বা বাসার অন্যান্য কিছু পরিবর্তন বা হালকা ইন্টেরিয়র ডিজাইনও যদি করাতে চান, তবে তা বাড়িওয়ালাকে জানিয়ে করুন। আর ঢাকার জনপ্রিয় আবাসিক এলাকাসমূহ খেয়াল করলে দেখা যাবে বাসা ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশি নিয়ম-কানুন মেনে চলে। পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে বাসা সাজানো হলে ভাড়া বাসা সাজানোও তেমন ঝক্কিরও নয়!
পরিশেষ
জীবনকে মানিয়ে নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। খুঁজে নিতে হবে সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ। ভাড়া বাসা সাজানো নিয়ে যেসকল সমস্যা ছিলো, আশা করি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে কিছুটা হলেও তার সমাধান দিতে পেরেছি। তবে যাই হোক দিনশেষে সবাই চায় নিজের পছন্দ মতো একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়তে। হোক তা বাড়ি কিংবা ছোট অ্যাপার্টমেন্ট। আপনি কি নতুন ভাড়া বাসা বা নিজের স্থায়ী ঠিকানার কথা ভাবছেন? তাহলে ব্রাউজ করুন Bikroy.com, যা বাসা ভাড়া ও কেনা সহ বিভিন্ন প্রপার্টি বিষয়ক তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য করবে।
Flats for rent in Dhaka | Flats for rent in Chattogram |
Flats for rent in Dhaka Division | Flats for rent in Khulna Division |
Flats for rent in Sylhet | Flats for rent in Chattogram Division |