প্রথম বাইক কেনার আগে যে বিষয়গুলো আপনার জানা প্রয়োজন
চালান কিংবা না চালান, বাইকে চড়ার সময় মুখের উপর বাতাসের কোমল ঝাপটার প্রেমে না পরাটা আসলেই কঠিন। একটি সুন্দর আবহাওয়ায় ট্রাফিক জ্যামকে পেছনে ফেলে চারপাশে সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে করতে গন্তব্যে পৌঁছানোই সব বাইকারদের স্বপ্ন। বাইক একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজ ট্রান্সপোর্টেশন বাহন – যাতে আছে কেবল দু’টো চাকা ও একটি মোটর এবং যা দিয়ে অনায়াসে ট্রাফিক জ্যামের ভেতর দিয়ে সবার আগে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ উপভোগ করা যায়।
আপনি হয়ত ছোট থেকে বড় হতে হতে অনেক বাইকে চড়েছেন কিংবা বর্তমানে রাইড শেয়ারিং ট্রেণ্ডের সুবাদে অনেক বাইকে চড়েছেন, কিন্তু আপনি যখন বাইক কিনতে যাবেন তখন আপনাকে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। নতুন বাইক কেনার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যা সম্পর্কে আপনার ভালো জ্ঞান থাকা অপরিহার্য এবং কিছু কিছু বিষয় বিবেচনা কিংবা প্রয়োজনে পুনঃবিবেচনায় আনতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো এতে কিছুটা সময় লেগে গেলেও যখন সব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আপনি জেনে যাবেন তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হবে।
সুতরাং বাইক কেনার আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা প্রয়োজন সেসব বিষয় সম্পর্কে এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হলো:
বাজেট নিয়ে কথা বলা যাক
বাইকের একজন মালিক হিসেবে আসল খরচ
আমরা বেশিরভাগ ক্রেতারাই চিন্তা করি যে আমাদের স্বপ্নের বাইক কেনার জন্য কি পরিমাণ অর্থ আমরা জমাতে পেরেছি বা কি পরিমাণ অর্থ আমরা আমাদের পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবো। এর উপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের বাজেট নির্ধারণ করি এবং আমাদের পছন্দের বাইকটি খুঁজতে বেরিয়ে যাই। কিন্তু আমরা অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ, যেমন – জ্বালানি খরচ, ফুয়েল এফিসিয়েন্সি, রেজিস্ট্রেশন, ইনস্যুরেন্স, ইকুইপমেন্ট, মেইন্ট্যানেন্স ইত্যাদি কথা মাথায় রাখি না। একটি মোটরসাইকেল ব্যবস্থাপনার খরচ একটি ব্র্যান্ড নিউ মোটরসাইকেলের বাজার মূল্য কিংবা একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোটর সাইকেলের দর কষাকষি করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। আরও জেনে নিন বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা ৫ টি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড সম্পর্কে।
বাইক
প্রথমত মোটরসাইকেলের ক্রয় মূল্য একটি বিবেচ্য বিষয়। বাজারে যেকোনো সময়ে আপনি মোটর কিনতে গেলেই অনেক ধরণের ভ্যারাইটি পাবেন। আপনার বাইক কেনার মূল উদ্দেশ্যকে বিবেচনা করে আপনি ১ লাখ থেকে শুরু করে অনেক দামি মোটরসাইকেল পাবেন। তবে নতুন মডেলের ভালো মানের বাইক আপনি সহজেই পাবেন ২ থেকে তিন লাখ টাকায়।
বর্তমান বাজারের কিছু নতুন এবং পুরাতন মোটরসাইকেলের দাম যাচাই করতে লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন Bikroy.com.
আইনি খরচ
আপনার পছন্দের মোটরসাইকেলটি কিনতে যাওয়ার আগে কিছু আবশ্যক আইনি খরচের হিসাব বিবেচনায় রাখবেন। রেজিস্ট্রেশন একটি এক-কালীন খরচ যা বেশ মোটা অঙ্কের। তারপ আরও কিছু আনুষাঙ্গিক খরচ আসে যেমন ধরুন ইনস্যুরেন্স।
সার্ভিসিং খরচ
ইকুইপমেন্ট এবং রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত খরচের খাতটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমরা বেশিরভাগ ক্রেতারাই এই খরচগুলো বিবেচনায় রাখি না। ছোট ছোট কিছু খরচ যেমন, টায়ারের সার্ভিসিং, স্পার্ক প্লাগ, বেল্ট, ইঞ্জিনের তেল, ফিল্টার ইত্যাদি একটি বড় অঙ্কের মাসিক বা বাৎসরিক খরচ সৃষ্টি করে। যদিও এসব পার্টসগুলোর দীর্ঘস্থায়ীত্ব একেকটির ক্ষেত্রে একেক রকম, সার্ভিস সেন্টারে প্রতিবার ভিজিট করলেই খরচ করতে হয়। আপনি যদি সময়মত প্রয়োজনীয় সার্ভিসিং না করান তবে দীর্ঘমেয়াদে বাইকে আরও বড় ধরণের সমস্যা দেখা দেয় যা আরও বেশি খরচের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের শহরে এবং শহরের বাইরে রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে বাইকের কিছু বিশেষ পার্টস যেমন ব্রেইক শুজ, ইঞ্জিন অয়েল, টায়ার ইত্যাদি সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রতিনিয়ত সার্ভিসিং করানোর প্রয়োজন পরে।
বাইক গিয়ার
আপনি যদি নিজেকে কেবল একজন সাধারণ রাইডার হিসেবেও গণ্য করেন তবে আপনার একটি গিয়ার, একটি হেলমেট এবং শু লাগবে। দাম যতই হোক, সেফটি গিয়ার উপেক্ষা করা একদমই উচিত হবে না এবং বাইক চালানোর সময় আমরা অবশ্যই অতিরিক্ত সেফটি গিয়ার নিয়ে রাস্তায় নামবো। চরম আবহাওয়া যেমন গরম, সূর্যের তাপ, বৃষ্টি, ধুলাবালি, ঝোড়ো বাতাস ইত্যাদির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে আপনাকে অবশ্যই একটি মোটরবাইক জ্যাকেট সাথে রাখতে হবে। পাশাপাশি আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে যে আপনি কতক্ষণ বাইক চালাবেন এবং সে অনুসারে আপনার হাত, হাতের তালু, আঙুল এবং এলবো রক্ষা করতে শকপ্রুফ গ্লাভস পরতে হবে। আপনাকে যদি ভাঙাচুরা রাস্তায় বাইক চালাতে হয় তবে আপনাকে এলবো এবং নি গার্ডস পরার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। আপনি কখনই রাস্তায় শতভাগ নিরাপদ থাকবেন বলে ভাবতে পারবেন না!
এখন একটি বাইক কেনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচ্য
বাইক পছন্দ করার সময় আপনাকে বাইক সম্পর্কে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হলে একদমই চলবে না। আসলে এটি জীবনের যেকোনো ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনি যখন বাইক কিনতে যাবেন তখন সেলসম্যান আপনাকে সব ধরণের তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে, তবে আপনি যখন বাইক কিনতে যাবেন তখন নিজেও বাইক সম্পর্কে আনুষাঙ্গিক তথ্য জেনে এবং বুঝে তারপর যাবেন। আপনি কি উদ্দেশ্যে বাইক কিনছেন – প্রতিদিনের নিত্য যাতায়াত, লং ড্রাইভ, জয় রাইড নাকি ভ্যাকেশন? এ বিষয়ে যদি শত ভাগ নিশ্চিত হয়ে যেতে পারেন তবে তা আপনাকে সঠিক বাইকটি বেছে নিতে সাহায্য করবে। এছাড়াও কিছু টেকনিক্যাল তথ্য রয়েছে যেগুলো বিবেচনায় না আনলেই নয় যেমন, ইঞ্জিন পাওয়ার, বাইকের সাইজ, বাইকের ওজন ইত্যাদি।
নতুন মোটরসাইকেল নাকি সেকেন্ডহ্যান্ড মোটরসাইকেল
আপনি কি একেবারে নতুন বাইক কিনবেন নাকি ব্যবহৃত বা সেকেন্ডহ্যান্ড বাইক কিনবেন এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কেবল বাজেটের কথাই ভাববেন না, আপনাকে নতুন বাইক বা পুরোনো সেকেন্ডহ্যান্ড উভয় ধরণের বাইক কেনার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো বিবচনায় আনতে হবে। এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে “আদর্শ সিদ্ধান্ত” বলে কোন কিছু এখানে কাজ করে না। তবে উভয় ক্ষেত্রের সহজ সংজ্ঞা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। নতুন মডেলের বাইকগুলো অনেক আরামদায়ক, নির্ভরযোগ্য এবং ভালো ওয়ারেন্টিসম্পন্ন যার জন্য ব্যবহৃত মোটরসাইকেলগুলোর চেয়ে আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই বেশি খরচ করতে হবে। নতুন বাইকার বা সবসময় চালান এমন বাইকারদের জন্য ব্যবহৃত বাইক কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা অপারেশনাল মডেল ব্যবহার করার সুবাদে তাদের আনুষাঙ্গিক খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কমই করতে হয় যা ব্যবহারিক ক্ষয়ক্ষতির ভয় বহুলাংশে কমিয়ে আনে এবং তাদের প্রতিদিনকার প্রয়োজন মেটায়।
মোটরসাইকেলের সাইজ
মোটরসাইকেল কিনতে গেলে আপনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়ে মুখোমুখি হবেন তা হলো মোটরসাইকেলের সাইজ। কোন সাইজটি আপনার জন্য উপযুক্ত? শারীরিক গঠনের উপর ভিত্তি করে বাইক কেনাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ হলো আপনি হাত দিয়ে ঠিকভাবে বাইকের হ্যান্ডেল ধরতে পারছেন কিনা এবং পা দিয়ে মাটি ছুঁতে পারছেন কিনা তার উপর বাইক চালানোর সামর্থ্য এবং স্বাচ্ছন্দ্য নির্ভর করে। কোন রকম শারীরিক কসরত বা কষ্ট ছাড়াই বাইকের সব রকমের কন্ট্রোলকে নিজের আওয়াতায় আনতে পারার উপর সঠিকভাবে বাইক চালানোর বিষয়টি নির্ভর করে। মোটকথা, সঠিক ভাবে বাইক চালানোর জন্য অন্তত এতোটুকু শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য সুনিশ্চিত করা আবশ্যক।
মোটরসাইকেলের ওজন
বাইকের সাইজের মত বাইক সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাইকের ওজনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি এমন ওজনের বাইক বেছে নিবেন যা আপনার শরীরের ওজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যাতে করে বাইক নিয়ন্ত্রণ করা, যেমন, মোড় নেয়ার জন্যে শরীরের ওজনের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। মনে রাখবেন বাইকের ওজন যাতে আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে না দাঁড়ায়, বরং চালানোর সময় আপনার জন্য আরামদায়ক হয়।
ইঞ্জিন পাওয়ার
বাইকের পাওয়ার একজন বাইক ক্রেতাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে থাকে এবং বাইকের পাওয়ার সঠিকভাবে ম্যানেজ করার বিষয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন পাওয়ারের সীমা নির্ধারণ করা আছে, আপনি ৮০ থেকে শুরু করে অনেক ধরণের বিকল্প পাবেন। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, আপনি যদি বাইক চালানোর ব্যাপারে একদম নতুন হয়ে থাকেন তবে এমন ইঞ্জিনের বাইক কিনবেন যার ইঞ্জিন সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় যাতে করে আপনি ধীরে ধীরে গিয়ার শিফট করে, ব্রেক ব্যবহার করে এবং কর্নার কাট করে আপনার রাইডিং স্কিল বাড়াতে পারেন।
উপসংহার
মোটরসাইকেল কেনার আগে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হয় সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো নিরাপদ চলাচল এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য আপনি যেখানেই বাইক চালান না কেনো আপনাকে ট্রাফিক আইন এবং নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে এবং অবশ্যই নিরাপত্তার জন্য মোটর সাইকেল সেফটি গিয়ার গুলো পড়ে নিবেন। বাইক চালানোর সময় অযথা ঝুঁকি নেবেন না এবং নিজের নিরাপত্তার পাশাপাশি আশেপাশের মানুষদের নিরাপত্তার কথাও বিবেচনা করবেন। যদিও আমরা আপনার প্রথম মোটরসাইকেল কেনার ব্যাপারে খুব সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, এই সাধারণ বিষয়গুলোই আপনাকে সচেতন হতে সাহায্য করবে। আপনাকে যা মনে রাখতে হবে তা হলো, আপনি আপনার রাইডিং স্কিল বাড়াতে থাকলে আরও ভালো মডেলের বাইক চালানোর জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠবেন এবং ভবিষ্যতে প্রিমিয়াম বাইক কিনে চালাতে পারবেন।
ইন্টারনেট তথ্যের একটি হাব এবং একজন সেরা ক্রেতা তিনিই যিনি সব তথ্য জানেন। ঢাকা এবং সারা বাংলাদেশের ভেতরে নতুন এবং সেকেন্ড হ্যান্ড বাইকের লিস্ট রয়েছে এমন ওয়েবসাইট আছে। এসব সাইটের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রি লিডার হিসেবে রয়েছে Bikroy.com। আপনার পছন্দের বাইকটি আজই খুঁজে নিতে চাইলে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে তবে সব সময় খেয়াল রাখুন যে বাইকের আইনি কাগজ পত্র সব ঠিকঠাক আছে কিনা। বাইক কিনতে যাওয়ার সময় সাথে এমন একজন বন্ধু বা পরিবারের সদস্য নিয়ে যাওয়াটা ভালো যার বাইক সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে। নিরাপদে বাইক চালান এবং উপভোগ করুন!