গাড়ি কেনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। আপনি যখন কোন কিছুতে আপনার সামান্য পরিমান অর্থও খরচ করবেন তখন তা যেন আপনার প্রত্যাশা পুরণ করে তা নিশ্চিত হন। আর তা যদি হয় নতুন গাড়ি, তবে সেক্ষেত্রে আপনি তার কন্ডিশন অনুযায়ী প্রত্যাশা কেমন হ্ওয়া উচিত তা ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। ভেতর এবং বাইরের সব কিছুই নিখুঁত হ্ওয়া উচিত। একই বছরের দুটি নতুন টয়োটা ক্যামরিজ মডেলের গাড়ি কার্যত অভিন্ন, এবং একই অবস্থা হবে অন্য মডেলের অন্য দুটি গাড়ির ক্ষেত্রেও। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে ব্যবহৃত বা পুরানো গাড়ির বিষয়গুলো এতোটা সহজ নয়। একই বছরের এবং মডেলের কিংবা ভিন্ন বছর বা মডেলের দুটি পুরানো গাড়ির কন্ডিশন সম্পূর্ন নির্ভর করে এর হিস্টরির উপর। পুরানো গাড়ি কেনা বরং অনেক বেশি জটিল প্রক্রিয়া কারন আপনাকে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হবে যদি আপনি বড় কোন লোকসানের মুখোমুখি না হতে চান। নীচে পুরানো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় দেওয়া হল, এগুলো বাংলাদেশে এমনকি বিশ্বের যে কোনো দেশে পুরানো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. গাড়িটি দেখতে কি ক্ষতিগ্রস্ত বা মেরামত করা হয়েছে বলে মনে হয়?
আপনি যখন বিক্রেতার কাছে গাড়ি যাচাই করার জন্য প্রথমবার যাবেন, তখন সময় নিয়ে খুব কাছে থেকে তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখুন। বিক্রেতা আপনাকে আগে থেকেই যেসব ক্ষয়-ক্ষতির কথা বলেছে তার বাইরে অন্য কোন ক্ষতির লক্ষণ থাকা উচিত নয়। গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত গর্ত, আঁচড়, মরিচা ধরা, কোন পার্টস না থাকা, এবং ভাঙা কাঁচ স্বাভাবিকভাবেই আপনার জন্য অশনি সংকেত। বাহ্যিক ত্রুটি থেকেই বোঝা যায় যে গাড়িটি খুব অবহেলায় রাখা হয়েছিল কিংবা কোন দুর্ঘটনায় পড়েছিল কি না। গাড়ির বাইরের অংশের পরীক্ষা করার পর, কেবিনের ভেতরে লক্ষ্য করুন ইন্টেরিয়রের অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য। সিট, ফ্লোর, দাগের সিলিং, টিয়ারস, পিলিং এবং নোংরা নির্গমনের ব্যবস্থা ভালো করে খেয়াল করুন। যদি বিক্রেতা ভালো করে দেখার আগেই গাড়িটি বিক্রির ব্যাপারে সমিয়িকভাবে সবকিছু মিটিয়ে ফেলে তাহলে বুঝতে হবে তিনি সম্ভবত কিছু লুকানোর চেষ্টা করছেন। আনাড়িভাবে লাগানো টেপ, আঠা, সূচিকর্ম, বাজে ভাবে করা ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা হয় যে তাড়াতাড়ি দফা-রফা করে ফেলা আসলে বড় কোন সমস্যা লুকানোর চেষ্টা। গাড়িতে সময় কাটালে সেটার বহুমুখি ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন এবং আনাড়িভাবে করা মেরামতের অংশগুলো বোঝা যায়। আমাদের সাম্প্রতিক একটি প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করেছি যে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার আগে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।
২. এটির মাইলেজ কত?
পুুরানো গাড়ি কেনা সেটা অনলাইন ক্লাসিফাইড সাইট, কোন বন্ধু কিংবা পুরানো গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই হোক না কেন এটি ঠিকমতো চলে কি না সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারনভাবে, একটি ভালোভাবে ব্যবহৃত গাড়ি অন্য আরেকটি কম চালানো হয়েছে এমন গাড়ির থেকে অনেক বেশি আলাদা। অডোমিটারের চলতি রিডিং এ গাড়িটি কতটা ফ্রিকুয়েন্টলি ব্যবহার করা হয়েছে তা বোঝা যায়। সাধারনভাবে কোনো গাড়ি ১২০,০০০ মাইলের বেশি চালানো হলে ধরা হয় সেটি ভালো ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পার্টসের কারনে এই পরিমান মাইলেজসম্পন্ন গাড়ি না কেনাই ভালো। তার বদলে এমন একটি গাড়ি দেখা উচিত যা ৫০,০০০ মাইলেরও কম চলে। স্বাভাবিকভাবে আপনি এমন একটি সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়িই কিনতে চাইবেন যেটি ৩০,০০০ মাইলের বেশি চালানো হয়নি। একটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যে ওডোমিটারটি বিক্রেতা গাড়িটি বেশি আকর্ষনীয় করতে নিজে সেট করেছে কিনা। এটা করলে গাড়িটি সঠিক মাইলেজ দেখাবে না এবং এর ফলে গাড়ির প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে না।
৩. বিক্রেতা কেমন বয়সী?
আপনি যদি কোন ব্যক্তির কাছ থেকে গাড়ি কিনতে যান তবে , বিক্রেতার চেহারার উপর মনযোগ দিন। যদি বিক্রেতা দেখতে অনেক তরুন হয়, যেমন সদ্য কৈশর শেষ করা থেকে ২৫ বছরের মাঝামাঝি, তবে সে ঝুকিপূর্ণভাবে গাড়ি চালিয়েছে এমন সম্ভাবনা প্রবল। তরুন গাড়ি চালকদের মধ্যে বয়স্ক চালকের তুলনায় দ্রুত গাড়ি চালানো, পথে অন্য যাত্রীদের সাথে ঠাট্টা করা, ফোনে কথা বলা বা ম্যাসেজ লিখা, ড্রাইভ করার সময়ে খাওয়া কিংবা অন্য কোন বেপরোয়া আচরন করার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। এটা থেকে বোঝা যায় যে গাড়িটি এক বা একাধিক দুর্ঘটনার কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি এই ক্ষয়-ক্ষতি যদি বাইরে থেকে দেখে নাও বোঝা যায় তব্ওু। তাই কোন ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে খেয়াল করুন তার বয়স ৩০ কিংবা তার বেশি কি না।
৪. ধূমপায়ী নাকি অ-ধূমপায়ী?
আপনি যদি ধূমপান না করে থাকেন, তাহলে কোন ধূমপায়ীর গন্ধযুক্ত গাড়ি আপনার জন্য সমস্যার কারন হতে পারে। সিগারেটের ধোয়া গাড়ির ফ্যাব্রিকের ভেতর ঢুকে যাবে এবং আপনি গাড়িটি কেনার অনেক দিন পর পর্যন্ত দুর্গন্ধ থাকবেই। এমনকি আপনি একজন ধূমাপয়ীর গাড়ি চালিয়ে অসুস্থ ও হয়ে যেতে পারেন। এই গন্ধ আপনার পোষাক, চুল এমনকি আপনার ত্বকেও ছড়িয়ে যেতে পারে। ধূমপানের কোনো চিহ্ন থাকলে আপনার গাড়িটি কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত। আর আপনি যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন তাহলে এটা আপনার জন্য কোনো সমস্যা হবে না।
৫. এটা কি কোনো স্পোর্টস কার?
গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখুন। স্পোর্টস কার কেনার পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল এটি দ্রুত গতিতে চালানো যায়। এমনকি গাড়ি সংগ্রাহক যারা কেবল মাত্র সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য গাড়ি কেনে তাদেরক্ষেত্র্ওে। আপনি যদি কোনো ব্যবহৃত স্পোর্টস কার কিনতে চান, তবে সতর্ক হোন কারন স্পোর্টস কারগুলো যখন খুব বাজে কন্ডিশন হয় তখন তা তার মালিক প্রাক-মালিকানাধীন মার্কেটে দিয়ে দেয়। এই গাড়িগুলোর প্রকৃত মালিক এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে তারপরে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। উদাহরন হিসেবে বলা যায় যে খুব ভালো কন্ডিশনের কোনো ব্যবহৃত মিতসুবিশি লেন্সার ইভলুশন অথবা হোন্ডা এস২০০০ পাওয়াটা খুবই দূর্লভ ব্যাপার। অন্যদিকে, অসংখ্য নতুন হোন্ডা একর্ডস এবং মিতসুবিশি লেন্সার পাওয়া যাবে খুব সহযেই। আরেকটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হল এসব পারফরমেন্স গাড়ির ইন্স্যুরেন্স করনোটা তুলনামূরলকভাবে বেশি ব্যয়বহুল। দেখে নিন বাংলাদেশের সেরা ৫ সর্বাধিক বিক্রিত গাড়ি।
৬. গাড়িটি থেকে কি ফ্লুয়িড নির্গত হয়?
আপনি যদি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণেই দেখেন গাড়ি থেকে ফ্লুইড নির্গত হয় তবে গাড়িটি না কেনাই উচিত। গাড়ি থেকে ফ্লুইড নির্গত হওয়া খুবই খারাপ লক্ষণ। সংশ্লিষ্ট কন্টেইনার থেকে ঠান্ডা, তেল অথবা জ্বালানি যেটাই নির্গত হোক না কেন আপনি কোনো প্রলোভনেই গাড়িটি কিনতে সম্মত হবেন না।
৭. দীর্ঘমেয়াদী খরচের কথা চিন্তা করুন?
পুরানো গাড়ি কেনার পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হল টাকা বাঁচানো। কিন্তু কম খরচে সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনলে সেটা খুব বেশি দিন ব্যবহার উপযোগি থাকে না। বাজে ধরনের কোন ব্যবহৃত গাড়ি কিনলে প্রায়ই হয়তো তাকে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে এবং প্রতিবার মেরামতের জন্য খরচ করতে হবে। আপনি এটাকে সচল রাখতেও এর পেছনে খরচ করতে করতে নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন এবং এরপরও সমস্যা নাও সমাধান হতে পারে।
৮. এটার কি কোনো ওয়ারেন্টি আছে?
বেশিরভাগ পুরানো গাড়িই ওযারেন্টি দেয় না। এটা বিশেষ করে সত্য যদি আপনি কোন ব্যক্তির কাছ থেকে গাড়িটি কেনেন। সার্টিফাইড পুরানো গাড়ি হয়তো কয়েকটি বিষয়ে ওয়ারেন্টি দিতে পারে, তাই কোন খ্যাতনামা ডিলারের কাছ থেকে গাড়িটি কিনতে পারেন যদি আপনি কিছু গ্যারান্টি পেতে চান।
৯. বিক্রেতা কত দাম চায়?
যেকোনো কিছু কেনার ক্ষেত্রে দামটা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ন। আর যখন গাড়ির মতো কোনো বড় কিছু কেনা হয় তখন এটি আরো অনেক বড় বিষয় হয়ে দাড়ায়। বিক্রেতা তার দাম চাইবার পূর্বে নিজে একটু খোজঁ খবর করে নিন। ক্যালি’স ব্লু বুক এর মতো তথ্য ভাান্ডার থেকে আপনি গাড়িটির আসল দামসহ সব কিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন। এর ফলে ক্রেতা অস্বাভাবিক দাম চাচ্ছে কি না সে বিষয়টি বুঝতে পারবেন।
১০. ব্যবহৃত যেকোনো কিছু কেনাই একটি ঝুঁকির ব্যাপার?
ব্যবহৃত যেকোনো কিছু কিনতেই আপনি ঝুুঁকি নিয়ে থাকেন। এমনকি আপনি যদি হিস্টোরি রিপোর্টসহ একটি গাড়ি কিনেন, তারপরও বুঝতে পারবেন না যে গাড়ির মালিক এটা কতটা যত্ন সহকারে ব্যবহার করেছে। ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে একটি গাড়ি ভালোমতো চলে এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত সুন্দর দেখায়, তাই হয় আপনি বিক্রেতার কাছ থেকে অফিসিয়াল কাগজপত্র নিন অথবা আপনাকে তার কথাকেই সত্য বলে ধরে নিতে হবে।
কোনো লেন-দেনে যাবার আগে অবশ্যই আপনার উচিত সেই নির্দিষ্ট মডেলের গাড়ির ব্যাপারে গেবষণা করা। আর যখন কোন পুরানো গাড়ি কিনবেন তখন এই গবেষণা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারন আপনি জানেন না যে আসলে আপনি কি কিনছেন। পুরানো গাড়ি কেনার সবচেয়ে ভালো উপায় হল কোনো টাকা পয়সা দেওয়ার আগেই বিক্রেতাকে অনেক ধরনের প্রশ্ন করা এবং খুব কাছে থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গাড়িটি পর্যবেক্ষণ করা। গাড়ি সম্পর্কে ভালো জানে আপনার এমন কোনো বন্ধুকে সাথে নিয়ে যাওয়াটা খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। কেননা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি তার মতামত নিতে পারবেন।