অনলাইন বা ডিজিটাল হাটে কোরবানির পশু কেনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
ঈদ-উল-ফিতর যেতে না যেতেই ঈদ-উল-আযহার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে! রোজার ঈদের চাইতেও কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি হয় দ্বিগুণ। কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে বিতরণ আর রান্না তো আছেই – দম নেওয়ারও যেন ফুরসত মেলে না কারোর। এবছর যদিও চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোভিড-১৯ মহামারি বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। সেই বড় খোলা হাটে বা মাঠে একের পর এক কোরবানির পশু জমায়েতের সুযোগ এখন খুব বেশি নেই। এসব স্থানে সামাজিক দূরত্ব পালন করাও প্রায় অসম্ভব। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে অনেকেই ভিড়ছেন অনলাইন বা ডিজিটাল হাটের দিকে। সময় এবং শ্রমের অপচয় রোধেও দারুণ কার্যকরী এসব হাট। তাই এই বছর আপনার পরিবারের জন্য উপযুক্ত কোরবানির পশু কিনতে নিচের টিপসগুলো সাহায্য করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনা শরীয়াহ পরিপন্থী কি না? ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কিনা চলুন জেনে নেওয়া যাক ইমাম জুবায়ের আল মাহমুদ এর কাছ থেকেঃ
কোরবানির পশুর স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
শুরুতেই আমরা জেনে নেবো কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোরবানির পশুর বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। গরুর ক্ষেত্রে বয়স হওয়া উচিত কমপক্ষে দুই বছর। উটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়স হতে হবে। তবে ৬ মাসোর্ধ্ব ভেড়া ও দুম্বা যদি এক বছরের কম হয়, কিন্তু দেখতে যদি এক বছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট মনে হয়, তাহলে তাও কোরবানি করা যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে অনেক অসাধু ব্যাপারিই ক্রেতা আকর্ষণ এবং বেশি লাভের আশায় কোরবানির পশুগুলোকে নানা রকম স্টেরয়েড ট্যাবলেট ও হরমোন ইনজেকশন দিয়ে মোটা তাজা করে থাকেন। কিন্তু এই রকম ক্ষতিকারক কেমিক্যাল পশুর স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এইসব পশুর গোশত খাওয়ার ফলে নানাবিধ জটিল রোগের উৎপত্তি হতে পারে। তাই কোরবানির জন্য একটি সুস্থ সবল পশু কেনার সময় ভালো করে যাচাই করা নেওয়া উচিত।
সঠিকভাবে কোরবানি দেওয়ার জন্য কোরবানির পশুটি অবশ্যই হতে হবে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ। পশুটি কোরবানির জন্য উপযুক্ত কিনা কীভাবে চিনবেন? চলুন জেনে নেওয়া যাক উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আসিফুজ্জামান-এর মতামতঃ
সুস্থ ও সবল পশুর বৈশিষ্ট্য
- পশু সচল হবে অর্থাৎ ক্লান্তি বা ঝিমুনিভাব থাকবে না।
- পশু সব সময় কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
- চোখ উজ্জ্বল দেখাবে।
- নাকের উপর ভেজা ভাব থাকবে।
- পশু জাবর কাটবে।
- চামড়া মসৃণ থাকবে।
- পিঠের কুঁজ টান টান হবে।
কোরবানির বাজারের হালচাল
ঈদের জন্য আর খুব অল্প সময়ই বাকি রয়েছে। অন্যান্য বছরগুলোতে এই সময় হাটগুলোর জমজমাট ব্যবস্থা থাকতো। কিন্তু হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কেনা বেশ কঠিন। তাই ক্রেতাদের ভরসার নাম অনলাইন বা ডিজিটাল হাট। হাতেগোনা কয়েকটি হাট চালু রাখার পাশাপাশি এ বছর ক্রেতাদের জন্য সরকার চালু করেছে ডিজিটাল হাট। এছাড়া বিভিন্ন ইকমার্স এবং খামারিদের ফেসবুক পেজেও মিলছে কোরবানির পশু।
প্রতিবারের মতো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস ও অনলাইনে গবাদি পশু কেনা-বেচার জনপ্রিয় মাধ্যম Bikroy.com ক্রেতাদের জন্য তুলনা ও যাচাই করার সুবিধার্থে আয়োজন করেছে বিরাট হাটের। অনেক বছর ধরেই ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষের জন্যই বেশ সহজ ও নির্ভরযোগ্য একটি প্ল্যাটফর্ম এটি। সম্ভাব্য ক্রেতারা সহজেই Bikroy-এর গবাদি পশু ক্যাটাগরিতে সার্চ করে দেখতে পারেন এবং সেখানে থাকা বিজ্ঞাপনগুলো দেখে যাচাই বাছাই করতে পারেন। বিজ্ঞাপনের দাম ও অফার তুলনা করে দেখলেই আপনি বুঝে যাবেন ঠিক কি আশা করা উচিত এবং সেটার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
এবছর কোভিড-১৯ এর কারণে Bikroy-এর বিশ্বস্ত পশু বিক্রেতারা খামারি নতুন কিছু ফ্যাসিলিটি অফার করছেন যা নিচে দেওয়া হলোঃ
-
- ঘরে বসে অনলাইনে কোরবানির পশু বেচা কেনার সুযোগ।
- লোকাল এরিয়াতে ফ্রি ডেলিভারি সুবিধা।
- পেইড ডেলিভারি সিস্টেম রয়েছে, সারা বাংলাদেশে।
- গোশত প্রসেসিং করে তা হোম ডেলিভারি দেওয়া হবে।
- ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধা রয়েছে।
- লাইভ ওয়েটে কেনার সুবিধা।
- কোরবানি ভাগীদার খুঁজে দেওয়া হবে এবং প্রসেসিং করে তা হোম ডেলিভারি দেওয়া হবে।
গ্রাহক, মেম্বার এবং আমাদের কর্মচারীদের মুখ থেকেই জেনে নিন আমাদের সার্ভিস সম্পর্কেঃ
ক্রেতাদের জন্য টিপস
প্রকৃতপক্ষে, কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে গৎবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। আপনার অভিজ্ঞতা এখানে সবচেয়ে বেশি কাজে দিবে। তবে আপনি যদি খুব বেশি অভিজ্ঞ না হয়ে থাকলে অবশ্যই বাজার সম্পর্কে জানেন এমন অভিজ্ঞ একজনকে সাথে করে গরু বাছাই করুন। অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য কিছু কার্যকরী টিপস নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- বাজারদর নিয়ে রিসার্চ করুনঃ অনলাইন বা ডিজিটাল হাটের পশুগুলো কোথা থেকে আনা হয়েছে সে বিষয়ে জেনে নিন। কোন সময়ে কিনছেন সেটাও কিন্তু মূল্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। এখন অনেক রকম ব্রিড বা জাতের কোরবানির পশু পাওয়া যায়, একেক ব্রিড অনুযায়ীও পশুর দামে তারতম্য হতে পারে। কোনো ডিল ঠিক করার আগে হাতের নাগালে থাকা মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে রিসার্চ করে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন যে ব্রিড ও ওজনের সাথে দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না।
- বিক্রেতার সাথে বোঝাপড়া সেরে ফেলুনঃ অনলাইন মানেই যে বিক্রেতার সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ করা যাবে না তা নয়। বিক্রেতার সাথে বিস্তারিত আলাপ করে পশুটির বয়স, লালন-পালনের ইতিহাস, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নিন। বহনের জন্য যদি নিজের কোন ট্রাক বা ভারবাহী গাড়ি না থাকে, তাহলে বিক্রেতার কাছ থেকে ডেলিভারি সুবিধা চাইতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে দরদামের সময় ডেলিভারি চার্জ নিয়েও আলাপ করে নেয়া উচিত। তাহলে বিক্রেতার চাওয়া মূল্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা বুঝতে পারবেন। তাছাড়া আপনার বাজেট সম্পর্কেও তাঁকে অবহিত করুন। শুধুমাত্র বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকে কিনুন, যেমনটা Bikroy-এর মার্কেটপ্লেসে রয়েছে।
- নিজ চোখে পশুটি দেখে নিনঃ অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে পশুটি নিজ চোখে দেখা। প্রথম পর্যায়ে বিক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্ন দিক থেকে যতবেশি সম্ভব ছবি চেয়ে নিন, ভিডিও কলের মাধ্যমেও দেখে নিতে পারেন। যদি কোনো বিক্রেতা তার সাধ্যমত স্পষ্ট ছবি বা ভিডিও দেখাতে অনাগ্রহী হন, তাহলে তার কাছ থেকে না কেনাই ভালো। এক্ষেত্রে সরাসরি দেখে আসা যাবে বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে পশুটি যাচাই করে নিতে পারেন।
- পছন্দের পশুটি কিনে ফেলুনঃ ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানির জন্য ধার্য করা পশুটি দেখে আপনার পছন্দ হতে হবে। পশু পছন্দ হয়ে গেলেও শেষমুহূর্তে চেক করে নিন। কোরবানির পশু বুঝে পেয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরই মূল্য পরিশোধ করুন। পেমেন্টের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সেরা অপশন হচ্ছে পশুটি নিজের হাতে পাওয়ার পর নগদ বা ডিজিটাল পেমেন্ট করা। কেনার পর পশুটিকে সম্ভব হলে নিজ হাতে যত্ন নিন এবং খাবার খাওয়ান।
শেষকথা
আশা করি এই বছর কোরবানিতে অনলাইন থেকে পশু কেনার ক্ষেত্রে আমাদের টিপসগুলো কাজে লাগবে। Bikroy-এ আমরা দিচ্ছি ১,৮০০ এরও বেশি গবাদি পশুর বিজ্ঞাপন। তাই আজই আমাদের সাইট থেকে দেখে নিন সেরা সব অফারগুলো আর সময়মত ঘরে নিয়ে আসুন আপনার পছন্দের কোরবানির পশুটি। অনলাইনে গরু বাছাই করলেও বিক্রেতার খামারে নিজে গিয়ে সবদিক যাচাই করে তবেই কিনবেন। একটা কথা দিয়েই ইতি টানছি, এবার অনেকেই কোরবানি দিতে পারবেন না। ত্যাগের মানসিকতা থেকে সকলের সাথে মিলেমিশে সব ভাগ করে নিতে পারলেই আসবে ঈদের আসল সার্থকতা।
সবাইকে ঈদ-উল-আযহা এর অগ্রিম শুভেচ্ছা!