বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য মৌসুমের সেরা ৫ হাল ফ্যাশনের জুয়েলারি
সারল্যেই সৌন্দর্যের সত্যিকার পরিচয়। কিন্তু বাংলাদেশের হাল-ফ্যাশনের জুয়েলারির কথা বলতে গেলে, এই বছরের জাঁকজমকের এই শিল্প পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে কিছুটা সাহসী, নাটকীয়, আবার মাঝে মাঝে একটু পাগলামি করার প্রবণতার উপর। সভ্যতার শুরু থেকে জুয়েলারি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তেই মেয়েদের মনকে জয় করে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। বাংলাদেশে জুয়েলারির ট্রেন্ড বার বার বদলায় এবং একেকটি ট্রেন্ডের সময়কাল একেক রকম হয়ে থাকে।
আজকে আমরা বাংলাদেশের নারী জনসংখ্যার মাঝে জনপ্রিয় কয়েকটি দারুণ জুয়েলারির ট্রেন্ড সম্পর্কে আলোচনা করবো, সত্যি বলতে এই মৌসুমের সেরা ৫টি জনপ্রিয় জুয়েলারি ট্রেন্ডের কথাই বলবো। এদের মধ্যে কিছু ট্রেন্ড অল্প সময়ের জন্য আসে আর হুট করেই চলে যায়, আবার কিছু ট্রেন্ড এমন রয়েছে যেগুলো মানুষের মনে দাগ কেটে রয়ে যায় বহু বছর ধরে। পক্ষপাত এড়ানোর জন্য আজ আমরা কোন র্যাংক বা ক্রমবিভাগ করবো না।
চোকার
এ যাবতকালে চোকার যতবারই বিবর্তিত হোক না কেনো, এদের ট্রেন্ড আর জনপ্রিয়তা কখনই পুরোপুরি চলে যায় না। এই চোকারের ইতিহাস আর উৎপত্তি নিয়ে মানুষ যতকিছুই বলুক না কেন, আমরা মেয়েরা সবাই চোকার ভালবাসি! আজকের দিনের উন্নত চোকার গুলো সাধারণ ভেলভেট কিংবা লেইস দিয়ে তৈরি চোকারের চেয়ে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এগুলো এখনও গলার সাথে একই ভাবে জড়িয়ে থাকে, কিন্তু এখন এটি আয়তনে যেমন বড় হয়েছে তেমনই এতে চলে এসেছে আরো বেশি জাঁকজমক। বর্তমানে নানা রকম উপাদান এবং নানা রকম আকর্ষণীয় ডিজাইনে চোকার নেকলেস পাওয়া যাচ্ছে, কিছু কিছু নেকলেসের সাথে সেট হিসেবে কানের দুলও রয়েছে। রকমারী অপশন হাতে থাকার কারণে, চোকার কিংবা চোকার-কলার নিয়ে আপনার কখনও একঘেয়ে অনুভব হবে না!
কুন্দন জুয়েলারি
কুন্দন জুয়েলারি যেন আজীবনের জন্য একটি ট্রেন্ড! সুচারু ও দক্ষ হাতে করা সুক্ষ্ম ডিজাইনের জন্য বহু কাল ধরে বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন-সচেতন ব্যক্তিদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই কুন্দন। ‘কুন্দন’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘উচ্চমাত্রায় পরিশোধিত স্বর্ণ’। এর কারণ হচ্ছে এই জুয়েলারি তৈরির পেছনে যে স্বর্ণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার কোয়ালিটি হতে হয় উচ্চমাত্রায় বিশুদ্ধ। এই ধরণের জুয়েলারি এককালে মুঘল রাজ পরিবারের সদস্যরা পরিধান করতেন এবং সেই যুগে করা কিছু গহনার ডিজাইন আজও বেশ জনপ্রিয়। কেননা এই ডিজাইনের জুয়েলারি দেখতে যেমন অনন্য, তেমনি সেগুলোয় আভিজাত্যের ছাপও রয়েছে। বহু মানুষের ধারণার ভুল ভেঙ্গে দিয়ে কুন্দন শব্দটির সাথে এতে ব্যবহৃত পাথরগুলোর কোনও সম্পর্ক নেই, বরং এটি সম্পূর্ণভাবে স্বর্ণের নির্ভেজাল বিশুদ্ধতার সাথে সম্পর্কিত। সেজন্যই এটি সুক্ষ্ম স্বর্ণের কাজের মধ্যে কাঁচের ছোট ছোট টুকরো বিশেষ প্রক্রিয়ায় বসিয়ে নিখাদ মাস্টারপিস তৈরি করার এক শিল্প। চাইলেই যেকোন বিশেষ অনুষ্ঠানে আপনি কুন্দন পরতে পারবেন, কেননা এগুলো বিভিন্ন রকম সাইজ ও স্টাইলে পাওয়া যায়।
টাসেল জুয়েলারী
পম পম এর ট্রেন্ডের পর, এখন স্টাইলিশ টাসেল জুয়েলারির ডিজাইন আলোচনায় উঠে এসেছে। এই ঝালরের মত গহনা গুলো একেকটি আলাদা ভাবে একক স্টেটমেন্ট জুয়েলারী হিসেবেও পড়া যায়, আবার কোন একটি নাজুক হালকা গহনার সাথেও সুন্দরভাবে মিলিয়ে পড়া যায়। এই জুয়েলারি বিভিন্ন রকম সুতা, ছোট পুঁতি, মুক্তা, চামড়া বা রেক্সিনের ফিতা সহ আরো নানা রকম উপাদান দিয়ে তৈরি করা যায়। এগুলো যে শুধুমাত্র রঙিন তা নয়, একই সাথে এদের লম্বা, মোলায়েম সুতার ঝালরের মসৃণ পরশ কখনো আপনার গালে বা কাঁধে এসে ছোঁয়ার এক অন্যরকম অনুভূতি এগুলোকে অন্যান্য জুয়েলারীর থেকে অনেকটাই আলাদা করে তোলে। টাসেল কানের দুল এমন একটি অনন্য গহনা যার সাথে আপনাকে মিলিয়ে কোনো নেকলেস কিংবা স্কার্ফ পড়তে হবে না। এমনকি টাসেল দিয়ে তৈরি নেকলেস আপনি চাইলেই যেকোন ডেনিম ও জ্যাকেট, রঙিন ঝালর সমৃদ্ধ ড্রেস ও মডার্ন ক্রপ-শোল্ডার ড্রেস ইত্যাদির সাথে যেকোন অনুষ্ঠানে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায়ও পড়তে পারবেন।
জয়পুরী জুয়েলারি
প্রচলিত জয়পুরি জুয়েলারি আপনাকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পোশাক যেমন শাড়ি, আনারকলি চুড়িদার কিংবা লেহেঙ্গার শোভাকে আরো বহুগুনে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। যেকোন বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য সেরা এই ডিজাইনের গহনা। জয়পুরী জুয়েলারিতে বিভিন্ন ধরণের ডিজাইন ও কনসেপ্টের অপশন রয়েছে; কখনও এগুলো অনন্য কুন্দন ও মীনাকারী কারচুপি ডিজাইনে পাওয়া যায়, কখনও শুধুমাত্র অমূল্য স্বর্ণ বা রূপার নিখুঁত ও চোখ-ধাঁধানো কাজেও একেকটা মাস্টারপিস তৈরি হয়।
জয়পুরী কুন্দন সেটগুলো প্রচলিত ব্রাইডাল গহনা হিসেবে জনপ্রিয় এবং বিভিন্ন রকম বিয়ের শাড়ি এবং স্বর্ণের কারচুপি করা লেহেঙ্গার সাথে এগুলো দারুন মানিয়ে যায়। মীনাকারীর উজ্জ্বল এবং নজরকাড়া অনুভব আমাদেরকে সিম্পল কিন্তু বিশেষ ডিজাইনের সালওয়ার কামিজ বা কখনও মিশ্র ধাঁচের ককটেল ড্রেসের সাথেও পারফেক্ট অনুষঙ্গ হিসেবে পরার স্বাধীনতা দেয়। আবার এদের মধ্যে এন্টিক পলিশ করা গহনাগুলো চাইলেই যেকোন অনাড়ম্বর পোশাক যেমন কুর্তি না টপসের সাথে মিলিয়ে পরা যায়। জয়পুরী ডিজাইনের সাধারণ স্বল্পমূল্যের গহনাগুলো আরো বেশি সিম্পল ও অনানুষ্ঠানিক পোশাক ও সাধারণ প্রোগ্রামে পরার জন্য তৈরি। অতএব চাইলেই আপনি জয়পুরি জুয়েলারির সাহায্যে প্রায় যেকোনো রকম অনুষ্ঠানে কিছুটা দেশাল ও সাংস্কৃতিক ছোঁয়া যোগ করতে পারবেন খুব বেশি খরচ না করেই!
হাতে তৈরি জুয়েলারি
আজকাল হাতে তৈরি কারুশিল্পের জুয়েলারি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বহু সৃজনশীল ব্যক্তি তাদের এইরূপ সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে একটা গোটা ক্যারিয়ার বা ব্যবসা গড়ে নিয়েছেন। কারুশিল্পের বিভিন্ন কিটস, নানা রকম উপাদান এবং অনলাইনে নানারকম টিউটোরিয়াল আজকাল খুবই সহজলভ্য। অনেক মেয়েরা তাদের নিজ হাতের কারুশিল্পের জুয়েলারি তৈরি করেন নিতান্ত শখের বশেই।
বিভিন্ন ধরণের হাতে রঙ করা বা তৈরি করা জুয়েলারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত লোকাল ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যায়। ইদানিং কাঁচের গম্বুজ ডিজাইনের জুয়েলারি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা বয়সের মেয়েদের আকৃষ্ট করে চলেছে, কেননা এদের ডিজাইনে রয়েছে নানা রকম বৈচিত্র ও পরিবর্তনশীল অপশন। আপনি যদি যথেষ্ট সৃজনশীল হয়ে থাকেন, তাহলে খুব সহজে নিজের ঘরে বসেই অনলাইনে গহনা তৈরির উপকরণ কিনে নিতে পারেন এবং নিজের অনন্য একটি জুয়েলারি সেট তৈরি করে নিতে পারেন।
বিভিন্ন ধরণের উপকরণ, হাতে আঁকা ছবি এমনকি ডিজিটাল প্রিন্ট করা ছবি একটি ধাতব ফ্রেমে বসিয়ে তার উপর একই আকৃতির একটি স্বচ্ছ কাঁচের গম্বুজ বসানো হয় স্বচ্ছ আঠা ব্যবহার করে। মড পজ নামে একটি স্বচ্ছ ঘন আঠা দিয়ে সরাসরি এইরূপ স্বচ্ছ গম্বুজ আকৃতির গহনা তৈরি করা সম্ভব, এতে করে কাঁচের গম্বুজ বসানোর প্রয়োজন হয় না। এরূপ অনেক জুয়েলারি আজকাল বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এইরূপ ডিজাইনের মধ্যে আংটি, পেনডেন্ট এমনকি কানের দুলও আজকাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে আংটি।
অন্যান্য জনপ্রিয় জুয়েলারিসমূহ
এই জুয়েলারি গুলো তো সবে মাত্র শুরু, আরো শত শত রকম দারুন সব জুয়েলারি তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর যত আকর্ষণীয় জুয়েলারিই কিনি না কেন, আমাদের মেয়েদের গহনার শখ কখনোই পুরোপুরি মিটবে না! কেননা মার্কেটপ্লেস গুলোয় এত বেশি ধরণের জুয়েলারির ছড়াছড়ি আর এত রকম ডিজাইনের বাহার, যে কোনটা রেখে কোনটা নেব, সেই সিদ্ধান্ত নেয়াটা কঠিন হয়ে পড়ে। আজকে আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই আরো কিছু জনপ্রিয় জুয়েলারির নাম, যেমন- পম পম জুয়েলারি, এন্টিক কয়েন জুয়েলারি, নেপালি স্টোনের জুয়েলারি, সাংস্কৃতিক এবং মডার্ন ডিজাইনের বড় আংটি, হালকা পাতলা চেইনের সাথে নজরকাড়া পেনডেন্ট, দারুন সব ডিজাইনের নথ বা নাকফুল ইত্যাদি। আর এত সব কিছুর মাঝেও সব সময়ের আকর্ষণ ডায়মন্ড বা অন্যান্য মূল্যবান রত্ন-পাথরের জুয়েলারি, যেগুলাও আসলে আমাদের বর্ণনা করা জুয়েলারিগুলোর মধ্যেও কোন না কোন ভাবে চলে আসে। কেননা এই রত্ন-পাথর গুলো মার্কেটে লভ্য যেকোন ধরণের জুয়েলারির মধ্যেই বসানো সম্ভব।
উপসংহার
পোশাক যদি একজন নারীর আত্মার প্রতিফলন হয়, তাহলে জুয়েলারি হচ্ছে একজন নারীর হৃদয়ের প্রতিফলন। যেভাবে একজন নারী নিজেকে অলংকৃত করেন, সেই থেকে তার মনের ভাব, রুচি, এমনকি ব্যক্তিত্বেরও পরিচয় পাওয়া যায়। একজন ব্যক্তি যদি কোন একটি স্টাইলকে অনুভব না করতে পারেন তাহলে তার উপর সেই স্টাইলটি চাপিয়ে দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু ট্রেন্ড ব্যাপারটা বেশ মজার এবং একটি ট্রেন্ডকে নিজের মধ্যে ধারণ করার জন্য যথেষ্ট পরিমান আত্মবিশ্বাস এবং অনেক বেশি সাহসের প্রয়োজন হয়, এমনকি যদি ট্রেন্ডটি মাঝে মাঝে আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামের সাথে খাপ না খায় তারপরও। অতএব আপনি যদি কোন ট্রেন্ডের ব্যাপারে সন্দিহান থাকেন, তাহলে বেশি চিন্তা ভাবনা না করে বিশ্বাসের উপর ভর করে ডানা মেলে দিন, নতুন কিছু করার চেষ্টা একবার হলেও করে দেখুন। কেননা সত্যিকারের সৌন্দর্য নির্ভর করে আপনি কীভাবে আপনার ভেতরের স্বত্বাকে বাইরে ফুটিয়ে তুলছেন তার উপর।
আমাদের সাইট bikroy.com তে ভিসিট করুন এবং আজই নতুন কিছু করে দেখুন। আমাদের বিশ্বস্ত বিক্রেতার পক্ষ হতে পোস্ট করা শত শত বাস্তব ও সম্ভাবনাময় অনুষঙ্গের বিজ্ঞাপন থেকে খুঁজে নিন আপনার নিজস্ব স্টাইল। শপিং হোক আনন্দের!