চাকরি

কাস্টমার সার্ভিসে চাকরির জন্য যে ৫টি সফট স্কিল থাকা জরুরি

 

সফট স্কিল বলতে কি বুঝায়? এটি এমন এক ধরনের দক্ষতা যা একজন ব্যক্তি যখন অন্য কারও সাথে কথা বলে তখনই বুঝা যায়। এ ধরণের স্কিল “হার্ড স্কিল”-এর মত নয়, হার্ড স্কিল সহজেই সনাক্ত করা যায় এবং ফর্মাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রপ্ত করা যায়। সফট স্কিল সব ধরণের চাকরির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ তবে কাস্টমার সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে অর্থাৎ যেখানে মানুষের সাথে ভাবের আদান প্রদান করাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য সেখানে সফট স্কিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই স্কিলগুলো আপনার জন্য শুধু অনেক নতুন চাকরির সম্ভাবনার সুযোগই সৃষ্টি করবে না, ভবিষ্যতে আপনার সফলতাকেও ত্বরান্বিত করবে। নিচে এমন কিছু সফট স্কিল নিয়ে আলোচনা করা হল যেগুলো কাস্টমার সার্ভিস সম্পর্কিত চাকরিতে আপনাকে সাফল্য এনে দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

১. মনোযোগ দিয়ে শোনা:

কোন সমস্যা সমাধান করতে হলে আগে সমস্যাটি বুঝতে হবে। এখানেই ভাল শ্রোতা হবার সার্থকতা, এবং মনোযোগ দিয়ে শোনার ক্ষমতাটি এখানেই কাজে লাগবে। আপনাকে আপনার কাস্টমারের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং বুঝতে হবে। আপনি যখন ফোনে কথা বলবেন তখন আপনার কাস্টমারের কথা আপনি পুরোটুকু শুনবেন, তার কথার মাঝে প্রশ্ন করে বা তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে কথা বলা শুরু করে ব্যাঘাত ঘটাবেন না। কেননা কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটালে অপর ব্যক্তিটির চিন্তা করার সাবলীল ধারাটি নষ্ট হয়ে যায়। কাস্টমার সার্ভিস চাকরি করতে গেলে আপনি হয়ত বুঝতে পারবেন যে কাস্টমাররা চান তাদের কথা বা মতামত মনোযোগ দিয়ে গুরুত্বের সাথে শোনা হোক এবং কাস্টমার সার্ভিস প্রোভাইডারের পক্ষ থেকে সেগুলো আন্তরিকভাবে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হোক এবং সত্যিকার অর্থেই সমাধান করা হোক। এতটুকু যদি কাস্টমারের জন্য করা যায় তবেই কাস্টমারের সন্তুষ্টি আক্ষরিক অর্থেই নিশ্চিত করা যাবে।

২. ভাবের আদান প্রদান

ভাবের আদান-প্রদান ভাল ভাবে করার মত স্কিল ভার্চুয়াল জগতের সব ধরণের কাজের জন্য আবশ্যক। অনেক সময়েই মানুষ সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে কিভাবে সমস্যাকে ব্যাখ্যা করতে হবে তা বুঝতে পারেন না সুতরাং কোন ব্যক্তি কি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা সঠিকভাবে খুঁজে বের করতে তার সাথে কার্যকারী উপায়ে কথা বলতে পারার দক্ষতা থাকতে হবে। ভাবের সঠিক আদান প্রদানের জন্য প্রয়োজন সক্রিয় মিথস্ক্রিয়া। এর অর্থ হচ্ছে কেউ যখন আপনার সাথে কথা বলছে তখন আপনি শুধু হা করে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। আপনি প্রথমে তাদের যথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন, তারপর বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক প্রশ্ন করে বা বর্ণনা করে পরস্পর বোঝাপড়া করে একটি অবস্থানে আসবেন। ভাবের আদান প্রদান করার আরেকটি ভাল দক্ষতা হল পরিষ্কার করে কথা বলা এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথা বলা। সময়ের অপর নাম টাকা, সুতরাং কথা অল্প সময়ে সেরে ফেলুন এবং যতটুকু সময়ে ভাবের আদান প্রদান চলবে তা যেন অর্থপূর্ণ হয়।

৩. দেহ ভঙ্গি

বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা দেহ ভঙ্গি সবচেয়ে বেশি এড়িয়ে চলা বা উপেক্ষিত সফট স্কিল। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ শেখাটাও অনেক কঠিন কারণ এটি আমাদের অনেক দিনের অভ্যাসের সমষ্টি। আপনি যখন কারো সাথে কথা বলেন তখন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেক কিছুর জানান দেয়, এটি অবচেতনভাবে মানুষদের বলে দেয় যে আপনি কথা বলার সময় কেমন অনুভব করছেন। সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি নিশ্চয়ই আপনার কাস্টমারদেরকে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিতে চাইবেন না। সুতরাং কথা বলার সময় হাত দুটো একটি অপরটির উপর বেঁধে আপনার বুকের উপর রেখে বা টেবিলে হেলান দিয়ে কথা বলবেন না। দেহ ভঙ্গি সাবলীল রাখুন, সবসময় হাত ছেড়ে রাখুন এবং মুখে হাসি রাখুন। এতটুকু দেহভঙ্গি দিয়েই আপনি আপনার কাস্টমারের দিনটি সুন্দর করে দিতে পারেন।

৪. ইতিবাচক মনোভাব

যেকোনো ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব রাখা একটি ভালো অভ্যাস। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কাস্টমার সার্ভিসের চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ কিংবা খুবই ভাল যেকোনোটিই হতে পারে। ইতিবাচকতা এবং আশাবাদ দুটো একই পথের নির্দেশক। যখন আপনি এ দুটোকেই আয়ত্ত করতে পারবেন তখন দেখবেন সমস্যা সমাধান করা যেমন সহজ হয়ে গেছে তেমনি কাস্টমারদের সামলানোর কাজও সহজ হয়ে গেছে। ইতিবাচকতা এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে আপনি আপনার তরফ থেকে ইতিবাচক শক্তি আপনার হতাশ সহকর্মী কিংবা কাস্টমারের দিকে সঞ্চালন করতে সক্ষম হবেন এবং তারাও ইতিবাচক হয়ে উঠবেন।

৫.সহমর্মিতা

সহমর্মীতা এমন একটি স্কিল যা অনুভব করতে হয়। কিভাবে সহমর্মী হতে হয় তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। সহজ ভাষায় বলতে গেলে আপনাকে কাস্টমারের জায়গায় দাড়িয়ে তার সমস্যাটি নিজের সমস্যা মনে করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে এবং তার মানসিক অবস্থাটি বুঝতে হবে। এটি বলা যতটা সহজ, করা ততটাই কঠিন এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। যেসব কর্মীরা সহমর্মীতায় পারদর্শী তারা খুব সহজেই কাস্টমারদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন। সহমর্মিতার মাধ্যমে আপনি পরিস্থিতির মাত্রা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন। কাস্টমার হিসেবে একজন ব্যক্তি যদি বুঝতে পারেন যে তার সমস্যাটি কেউ একজন বুঝতে পেরেছেন এবং তার মত করে অনুভব করতে পেরেছেন তবে সেই ব্যক্তি বিষয়টিতে অত্যন্ত খুশি হবেন এবং প্রশংসা করবেন।

কোন চাকরির ব্যাপারে আমরা প্রতীয়মান দিকগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেই। আমরা কেবল শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতাকে অধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকি এবং ছোট ছোট বিষয়গুলো যেগুলো প্রকৃতপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেগুলোকে কম প্রাধান্য দেই। উপরে আলোচিত সফট স্কিলগুলো যদি আপনি রপ্ত করতে পারেন তবে আপনি আপনার কাস্টমারকে সেরা সার্ভিস দিতে সক্ষম হবেন। যা আপনাকে ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজের সুযোগ করে দেবে এবং সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে।

Bikroy.com/Jobs এ কাস্টমার সার্ভিসে খুঁজে নিন হাজারো চাকরির অফার! আজই আবেদন করুন।

Facebook Comments
সাবস্ক্রাইব করুন

No spam guarantee.

Show More

Related Articles

Back to top button
Close
Close