স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯-এর কিছু অনন্য ফিচার যা পার্থক্য গড়ে তোলে
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, গত বছর, স্যামসাং তাদের ইউজারদেরকে বড় স্ক্রিনের টপ এবং বটম বেজেলহীন নতুন ডিভাইস “আনবক্স” করার ডাক দিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছিলো বিশ্বের মোবাইল বাজারে। স্যামসাং মোবাইল বরাবরই তাদের ইউজারদের জন্য অসাধারণ ডিসপ্লে সমৃদ্ধ ডিভাইস অফার করে এসেছে এবং গত বছরে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৮ সব দিক থেকেই ছিলো একটি বিশ্বসমাদৃত এবং সাড়া জাগানো স্মার্টফোন। স্মার্ট ফোনের বাজারে যখন অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলো টিকে থাকার জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে চলেছে তখন স্যামসাং রীতিমত হাজির হয়েছে তাদের নতুন ফোন গ্যালাক্সি এস৯ নিয়ে। এই ফোনটিকে ঘিরে ব্যবহারকারীদের আকাঙ্খ্যা আকাশ্চুম্বী, মতের অমিল হতে পারে, তবে স্যামসাং ব্যবহারকারীদের আকাঙ্খ্যা পূরণে সত্যিকার অর্থেই সফল!
স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ হয়তো এর আগের ফোনগুলোর তুলনায় আহামরি কোন ব্যতিক্রমধর্মী ফোন নয়, তবে এটি লাক্সারি ইউজারদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি যথার্থ স্মার্টফোন। “আনবক্স” গ্যালাক্সি এস৮-এর মত এর ডিজাইনে বড় ধরণের কোন পরিবর্তন না এনে এটি মূলত ডিজাইন করা হয়েছে নতুন ফিচার সংযোজন করার লক্ষ্যে। এটি বাজারে এসেছে দু’টি সাইজে, একটি স্ট্যান্ডার্ড সাইজ এবং অপরটি প্লাস সাইজ।
এ বিষয়টি লুকানোর কোন অবকাশ নেই যে ভৌগলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ব্যবহারকারীরা ভিন্ন ধরণের ডিভাইস চালিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। স্মার্টফোনগুলোর পারফরম্যান্স খুব বেশি ভিন্নধর্মী না হলেও এদের টেকনোলজিগুলো তুলনা করা যায়। স্মার্টফোনের ভেতরটা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে এস৯-এর অ্যাসপেক্টগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এস৮-এর মতই।
স্যামসাং-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপেলকে নিয়ে যদি কিছু কথা না-ই বলা হয় তবে রিভিউ হয় কিভাবে! অ্যাপেল এক্স-এর কারণে গ্যালাক্সি এস৯ গ্যালাক্সি এস৮-এর মত খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি। এ নিয়ে দ্বিমত বা বিতর্ক যা-ই হোক না কেনো, অ্যাপেল এক্স বাজারে যথেষ্ট সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। একটি ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক এবং অদ্ভুত অডিও সিস্টেমসমৃদ্ধ এস৯ ২০১৮ সালের একমাত্র হাই-এন্ড ডিভাইস হিসেবে নিজেকে দাবি করতে পারে।
আরও দেখে নিনঃ অ্যাপল ২০১৮ঃ নতুন iPhone XS রিভিউ!
তবে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯-এ আসলে নতুন কি এমন আছে? চলুন এর ফিচারগুলো সম্পর্কে জেনে আসা যাক। এর আকর্ষণীয় ফিচারগুলো শুনে হয়ত আপনি সাউথ কোরিয়ার এই বিশাল কোম্পানির লেটেস্ট স্মার্টফোনটি কিনতে আগ্রহী হবেন।
ক্যামেরা
গ্যালাক্সি এস৮ যখন তাদের “আনবক্স” ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মার্কেট বাজিমাত করেছিলো, ঠিক তেমনি স্যামসাং এস৯ বাজিমাত করছে এর ক্যামেরা দিয়ে। এস৯-এর ক্যামেরা ক্যাপাবিলিটি তাদের মার্কেটিং-এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কারণ তারা ক্যামেরাটিতে যা অফার করছে তা বাজারের অন্যান্য স্মার্টফোনের ক্যামেরার তুলনায় অনন্য। এস৯-এর নতুন ক্যামেরাটিতে রয়েছে ভ্যারিয়েবল-অ্যাপারচার সেন্সর যা একে বাজারের ফিক্সড-অ্যাপারচারসমৃদ্ধ স্মার্টফোনগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় মেকানিক্যাল অ্যাডভান্টেজ দিয়ে এগিয়ে রেখেছে। এই ফিচারটি কার্যকর উপায়ে ম্যানুয়াল মোডে প্রোফেশনালভাবে ব্যবহার করা যাবে। সহজভাবে বলতে গেলে, এর প্রধান ক্যামেরাটি এফ/১.৫ থেকে এফ/২.৪-এর মধ্যে সোয়াপ করতে সক্ষম। এফ/১.৫ লো লাইটেও আর্টিস্টিক শটের জন্য এবং এফ/২.৪ সাধারণ ছবি তোলার জন্য নিখুঁত।
স্যামসাং এস৯ এগিয়ে থাকার আরেকটি কারণ হলো এর “লাইভ ফোকাস” এফেক্ট, যা বোকেহ এফেক্ট নামেও পরিচিত। গ্যালাক্সি এস৯ প্লাসের আরেকটি অনন্য অপশন হলো এর সুপার-স্লো মোশন ভিডিও ধারণ করার ক্ষমতা। সুপার স্লো মোশন সাধারণ স্লো মোশনের উন্নত সংস্করণ যা অনেকেরই পছন্দের। যদিও, সুপার স্লো মোডে ভিডিও রেকর্ড করা বেশ কষ্টসাধ্য। স্লোমোডের জন্য হয় ফোনটি সঠিক মুহূর্তগুলো তুলে ফেলতে সক্ষম হবে অথবা আপনি ভিডিও শর্ট বার্স্টে রেকর্ড করবেন। এটি একটি অসাধারণ ফিচার যা ভবিষ্যতে কেবল আরও উন্নত হতে থাকবে।
স্পীকার
যদিও আমি বারবার বলছি যে গ্যালাক্সি এস৯ মূলত গ্যালাক্সি এস৮-এর আপডেটেড ভার্সন, এর একেজি-টিউনড স্টেরিও স্পীকারটি কিন্তু রীতিমত দুর্দান্ত। গত বছরের এস৮ নিয়ে (এবং এর আগের প্রায় সকল স্যামসাং স্মার্টফোন নিয়ে) আমাদের অভিযোগ ছিল একটাই – স্পীকার খুবই নিম্ন মানের। বটম স্পীকারটি নিচের দিকে এমনভাবে প্লেইস করা ছিলো যে সাউন্ডের আউটপুট ছিলো অসন্তোষজনক। নতুন গ্যালাক্সি এস৯-এর একটি টপ স্পীকার আছে যার পারফরম্যান্স অনেক ভালো, সাউন্ড বিকৃতি হয় কম এবং এতে আছে সারাউন্ড সাউন্ড টেকনোলজি।
সাউথ কোরিয়ান কোম্পানি, স্যামসাং বিবৃতি দিয়েছে যে তাদের নতুন ডিভাইসটির স্পীকার অনেক উন্নতমানের এবং ডিভাইসটির সাথে এই স্পীকার সংযোজন করতে তাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। সারাউন্ড সাউন্ড অ্যাবিলিটি নিশ্চিত করতে তাদেরকে ডাইনামিক স্পীকার সংযোজন করতে হয়েছে এবং ফোনের উপরের অংশটি ছিলো এই স্পীকার সংযোজন করার জন্য সেরা স্পট। ইন্টারনাল যত কম্পোনেন্ট রয়েছে সবকিছুকেই নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে যেমন এই নতুন পাওয়ারফুল এবং স্লিম স্পীকারটিকে ডিভাইসের উপরের অংশে বসানোর জন্য এর ফ্রন্ট ক্যামেরা এবং আইরিস স্ক্যানারের অবস্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে।
১.৪ গুণ বেশি সাউন্ডের এই স্পীকারের আউটপুট অসাধারণ। সারাউন্ড সাউন্ড ক্যাপাবিলিটি নিশ্চিত করার জন্য স্পীকার হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে ডলবি অ্যাটমস। একটি থ্রী-ডাইমেনসনাল অডিও এনভায়রনমেন্ট শ্রোতাদের দিবে সারাউন্ড সাউন্ডের ইম্প্রেশন। একেজি ফাইন টিউনিং বেস সাউন্ডের রেঞ্জ এমনভাবে বাড়ানো হয়েছে যাতে করে উচ্চমাত্রার ভলিউমে সাউন্ড ফেটে না যায়। ডিভাইসটির ইয়ারপিস নতুন স্পীকারের ফাংশন নিশ্চিত করে। এই অ্যাসপেক্টটি স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯-এর মুভি এবং গেম খেলার পারফরম্যান্সকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
এআর ইমোজি
এস৯ প্রায় এমন এক ধরণের ইম্প্রেশন দিয়েই ফেলেছিলো যে ডিভাইসটির ক্যামেরাকে ঘিরে যত জল্পনা-কল্পনা হয়তবা অসন্তোষজনক হবে। কিন্তু এর নতুনত্বের প্রধান কম্পোনেন্ট হলো এআর ইমোজি এবং বিক্সবি ভিশন। ম্যানুফ্যাকচারার আধুনিক মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বিশেষ নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছেন কেননা আমরা প্রতিনিয়ত আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী ফিচারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
অ্যাপেল তাদের আইফোন এক্স-এ অ্যানিমোজি সংযোজন করে একদম যথার্থ কাজটিই করেছে যা এর অ্যান্ড্রয়েড প্রতিযোগীদের থেকে বেশ এগিয়ে রাখতে সক্ষম। তেমনিভাবে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯-এর ক্ষেত্রে স্যামসাং-এর ভার্সনটি হলো এআর ইমোজি। বিল্ট-ইন মেনু থাকায় এআর ইমোজি তৈরি করা এখন আরও অনেক বেশি সহজ। ইউজাররা এখন খুব সহজেই সেলফি তুলতে পারেন এবং ভার্চুয়াল অ্যাভাটার এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাকে খুব সহজেই মনমতো ড্রেস এবং স্টাইলে সাজানো যাবে।
সিস্টেমটি থ্রী-ডি মডেল তৈরি করার জন্য প্রায় ১০০টির মতো ফেসিয়াল ফিচার তৈরি করতে সক্ষম যা তাদের চেহারায় এক্সপ্রেশন এবং ইমোশন আনতে পারবে। যেমন আপনি ক্যামেরায় যেমন পোজ দিবেন, এআর ইমোজিও ঠিক একইভাবে পোজ দিবে। আপনি এআর ইমোজি ভিডিও কিংবা ছবির আকারে ধারণ করে তাতে সাউন্ড যোগ করে জিআইএফ হিসেবে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ও ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার অ্যাভাটার ব্যবহার করে ম্যাসেজের সহজ রিপ্লাই দেয়ার জন্য সাধারণ ইমোজির মত প্রি-লোডেড এক্সপ্রেশন রয়েছে যা আপনি স্যামসাং কী-বোর্ডে খুঁজে পাবেন।
বিক্সবি
বিস্কবি খুব দ্রুত ট্রান্সলেট করার দুর্দান্ত সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে আপগ্রেড করা হয়েছে। এর লাইভ ট্রান্সলেশন ফিচারের মাধ্যমে, আপনি খুব সহজেই বিক্সবির মাধ্যমে বিদেশি টেক্সট স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সলেশনের জন্য ধারণ করতে পারবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিক্সবি গুগল ট্রান্সলেটের চেয়েও বেশি দ্রুত গতিতে কাজ করে। গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় বিষয়টি হলো এটাই যে এটি হার্ডওয়্যারের জন্য দ্রুতগতিতে ট্রান্সলেট করে না, বরং এর দ্রুত গতির পেছনের কারণটি হলো ইন্টারনেট স্পীড। আপনার ইন্টারনেট যত দ্রুতগতির, বিক্সবিও কাজ করবে ঠিক ততোটাই দ্রুত গতিতে।
আপনি ক্যামেরাটিকে স্থান, অবজেক্ট, খাবার এবং ব্যাভারেজ যেদিকেই তাক করবেন বিক্সবি ভিশন সবকিছু দারুণভাবে আইডেন্টিফাই করে ফেলবে। স্যামসাং এআর-এর বিক্সবির অতিরিক্ত পারদর্শিতার নিদর্শনস্বরূপ খাবার, মন্যুমেন্ট, স্থান ইত্যাদি সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন আরও তথ্য। বারকোড স্ক্যান করার ফিচারও রয়েছে তবে বিক্সবি গ্যালাক্সি এস৯-এর অ্যাবিলিটি দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আরও স্ট্যান্ডার্ড ফিচার হিসেবে ব্যাটারী নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই, কেননা এস৮-এর ব্যাটারী ছিলো ৩০০০ এমএএইচ এবং এস৯-এর ব্যাটারীও ৩০০০ এমএএইচ তবে এস৯প্লাস-এর ব্যাটারী ৩৫০০ এমএএইচ। পাওয়ার সেভিং মোড আপনার কাজে আসবে, তবে অন্যান্য সাধারণ ফোনের মত আপনি যদি অনেকক্ষণ চালাতে চান তবে চার্জ দেয়া আবশ্যক। কুইক চার্জ এবং ওয়্যারলেস চার্জ সুবিধা থাকার কারণে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে কারণ দুটোই ডাস্ট এবং ওয়াটার প্রোটেকশন ফিচারসমৃদ্ধ। আরও জেনে নিন আসন্ন সব স্মার্টফোনে সেরা যে ফিচারগুলো না থাকলেই নয়।
মতামত
সব মিলিয়ে সাউথ কোরিয়ার জায়ান্ট কোম্পানির নতুন স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ যে কাউকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করতে সক্ষম। যদিও অনেকের মনে হবে যে তারা তাদের গ্যালাক্সি এস৮-এর মত ঠিক একই ফোনটাই ব্যবহার করছেন। অবশ্য একে এস৮-এর কেসিং-এ সম্পূর্ণ নতুন ফিচার সমৃদ্ধ এবং আপগ্রেডেড ফোনও বলা চলে। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন খুব দ্রুত আপগ্রেড হচ্ছে, দাম অনুসারে স্যামসাং এস৯ এখন বাজারের সেরা স্মার্টফোন।
স্যামসাং এস৯-এর ডিজাইন দুর্দান্ত এবং এ জাতীয় যত স্মার্টফোন রয়েছে তাদের মধ্যে এটি সেরা ডিসপ্লে সমৃদ্ধ স্মার্টফোন। ডিভাইসটির জন্য স্যামসাং এমন সেরা একটি ক্যামেরা তৈরি করেছে যা এর ডুয়াল-অ্যাপারচার টেকনোলজি ব্যবহার করে লো লাইটে আরও স্মার্ট এবং অতুলনীয় পারফরম্যান্স এনে দিতে সক্ষম। উন্নত ম্যাটেরিয়াল এবং হালকা ওজনের তুলনায় পারফরম্যান্স অনুযায়ী এটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি ডিভাইস।
নতুন এস৯ বা এস৯প্লাস কেনার পেছনে আগ্রহী হওয়ার অন্যতম একটি যথার্থ কারণ হলো এর ক্যামেরা। এটি কিনতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হবে তা অনেকের পক্ষেই বয়ে নেয়া বেশ কঠিনই হবে তবে বিনিময়ে যা পাওয়া যাবে তা সত্যিকার অর্থেই অমূল্য। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৯ ২০১৮ সালের সেরা স্মার্টফোন হিসেবে স্বীকৃতি পাবার যোগ্য এবং একই সাথে এটি প্রতিযোগী স্মার্টফোনগুলোর জন্যও কঠিন প্রতিযোগিতা ছুড়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আপনি এখন একটি নতুন বা ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেনার চিন্তা করে থাকলে দেখে নিন আপনার ফোনের সাথে চলতি বছরের সেরা স্মার্টফোন এক্সেসরিজের ট্রেন্ড গুলো।