জেনে নিন কীভাবে জ্বালানী খরচ কমাবেন
আপনি কি নিত্যদিনের জ্বালানীর পেছনে আপনার কষ্টের টাকা ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত?
তাহলে ছুটোছুটি করার আর প্রয়োজন নেই……আপনি ঠিক যায়গাতেই এসেছেন। এই প্রতিবেদনটি আপনারই জন্য!
জেনে নিন বাংলাদেশে কীভাবে জ্বালানী খরচ কমিয়ে চলতে পারবেন সেই সংক্রান্ত নানা রকম উপায়।
জ্বালানী খরচ ব্যাপারটাই এমন যা দিন দিন শুধু বেড়েই চলে, কমার কোন লক্ষণ নেই। একটি দেশের অর্থনীতি যতই মজবুত হোক না কেন, পৃথিবীর সব প্রান্তেই গ্যাসোলিনের দাম বেড়ে যাওয়াটা একটা বড় সমস্যার আকার ধারণ করেছে, যা নিরূপণ করা বেশ কঠিন। যেখানে সারা বিশ্বের মানুষ একযোগ হয়ে চাইছে জ্বালানীর দাম কমানো হোক, হোক তা যে কোনো যানবাহন এর জন্য, সেখানে কোন দেশের সরকারেরই সামর্থ্য নেই সহজে সকলের সেই দাবি পূরণ করে দেয়ার বা এই সমস্যার কোন স্থায়ী সমাধান উপস্থাপন করার।
কিন্তু আজ আমরা এই প্রতিবেদনটিতে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সবচেয়ে সেরা এবং কার্যকরী এমন কিছু উপায়, যার সাহায্যে চালক ও মালিকেরা জ্বালানী খরচ বেশ কমিয়ে নিতে পারেন। বিশেষ করে আপনার গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেলটি চালানোর সময় কীভাবে কম জ্বালানী পুড়িয়ে বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারবেন সে বিষয়ে কিছু উপায় আমরা এখানে উপস্থাপন করব।
অতএব যেখানে আমাদের মধ্যে অনেকেই তাদের জ্বালানীর ট্যাংক ভরার সময় আতংকে ভুগি, সেখানে এই টিপস গুলো আপনার জ্বালানী তেল কিংবা গ্যাসের শেষ বিন্দু পর্যন্ত প্রত্যেকটি ইউনিটের সঠিক সদ্ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। ফলস্বরূপ আপনি আপনার জ্বালানী খরচ অনেক পরিমাণে কমিয়ে আনতে পারবেন, যা এড়িয়ে চলা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব!
অতএব, চলুন দেখে নিই বাংলাদেশে জ্বালানী খরচ কমিয়ে চলাচল করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কিছু উপায়:
রাস্তায় কাটানো পুরোটা সময়
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, জ্বালানী খরচ কমিয়ে আনার অন্যতম সেরা উপায় হলো সেটি কম মাত্রায় ব্যবহার করা। সে জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে যা করতে হবে তা হলো রাস্তায় চলাচলের সময় যতটা কম করে সম্ভব ঠিক ততটা জ্বালানী পোড়াবেন। এখন হয়ত শুনতে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু মাঝে মাঝে কার পুলিং ও রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মত গুরুত্বপূর্ণ উপায়গুলো ব্যবহার করার কথা ভেবে দেখবেন। আপনার যদি একই এলাকায় বসবাসরত কোন কলীগ থেকে থাকেন, তাহলে দু’জনেই প্রতি দিন নিজ নিজ বাহন (গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেল) চালিয়ে কাজে যাওয়ার বদলে মাঝে মাঝে শেয়ার করে চলুন বা এক সাথে কোণ রাইড শেয়ারিং সার্ভিস ব্যবহার করুন। এই ভাবে আপনারা দু’জনই অনেক পরিমাণে জ্বালানী খরচ কমিয়ে আনতে পারবেন, যা নিজেরা একা একা করা প্রায় অসম্ভব।
কাছাকাছি রয়েছে এমন কোন যায়গায় যাওয়ার জন্য বা ছোট খাটো দুরত্ব অতিক্রম করার জন্য, যেমন বাজারে যাওয়া বা অন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিমান কমিয়ে আনতে পারেন। এলাকার মধ্যে কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার সময় ড্রাইভ করে বা গাড়ি চালিয়ে না গিয়ে, পায়ে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে কিংবা বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে রাইড নিয়ে যেতে পারেন। রাস্তায় আপনার গাড়ি কম নামিয়ে বা ব্যবহার কম করার অন্যতম উপায় গুলোর মধ্যে এগুলো কয়েকটি, যা মেনে চলা বেশ সহজ এবং জ্বালানী খরচ কমানোর মাধ্যমে আপনার কষ্টের উপার্জন করা টাকা কিছুটা হলেও বাঁচাতে বা জমিয়ে রাখতে পারবেন।
জ্বালানী কেনার অভ্যাস
আপনার বাহনের জন্য যতটা সম্ভব সাশ্রয়ী ও উপযুক্ত মানের জ্বালানী ব্যবহার করার কথা ভেবে দেখুন, হোক সেটা আপনার গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেল। যেখানে বেশির ভাগ গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেলে একটি বিশেষ মাত্রার মান ও গুন সম্পন্ন জ্বালানী পেট্রোল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে, সেখানে অনেক যানবাহনই কম গুন মান সম্পন্ন জ্বালানী গ্যাসোলিন ব্যবহার করে কোন সমস্যা ছাড়াই ভালো পারফর্মেন্স দিতে পারে। অতএব আপনি একজন মেকানিকের সাহায্য নিয়ে আপনার বাহনটি চেক করিয়ে নিতে পারেন যে সেটিতে ঠিক কতটা বেশি দামের জ্বালানী ব্যবহারের প্রয়োজন হবে, নাকি সেটি কম দামের মাঝারী মানের জ্বালানী ব্যবহার করলেও কার্যকরী ভাবে চালানো সম্ভব কি না। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন গ্যাস স্টেশনে জ্বালানীর দাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনে রাখতে পারেন ও তুলনা করতে পারেন। আপনার মাসিক কিংবা বাৎসরিক জ্বালানী খরচ কম বা বেশি হওয়ার ক্ষেত্রে এই দু-চার পয়সার দামের ব্যবধানও অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যেখানে গ্যাসের দাম এমনিতেই কম বেশি হয়ে থাকে, সেখানে কিছু গ্যাস পাম্প বা স্টেশন রয়েছে যারা সব সময়ই কিছুটা বেশি দাম রাখে। অতএব জ্বালানীর পেছনে খরচ কমিয়ে আনার জন্য আপনার জ্বালানী কেনার অভ্যাসের মধ্যেও কিছুটা পরিবর্তন আনার কথা চিন্তা করে দেখুন।
গতির সর্বোচ্চ মাত্রা
আরেকটি গুরুতর সমস্যা হচ্ছে আপনার ড্রাইভিং এর অভ্যাস এবং সেটি কিভাবে আপনার বাহনটির মাইলেজ, জ্বালানী খরচ, বাহনটির সামগ্রিক অবস্থা ইত্যাদির উপর প্রভাব ফেলে। এরকম সামান্য একটা অভ্যাস যে আসলেই আমাদের বাহন অথবা জ্বালানী খরচের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে সেই ব্যাপারটি আমরা প্রায়ই ঠিকমত লক্ষ্য করতে ভুলে যাই। আমাদের অন্যতম প্রাথমিক ও মূল অভ্যাস হচ্ছে অতি দ্রুত গাড়ি বা মোটর সাইকেল চালানো। যেখানে বাংলাদেশের রাস্তাঘাট প্রতিটি কোনায় কোনায় গতি সীমা নির্ধারণ করে তৈরি করা হয়নি, সেখানে আমাদের উচিত সব সময় একটি মাঝারী গতিতে ড্রাইভ করা। মাত্রাতিরিক্ত গতি বৃদ্ধি করা অর্থাৎ ত্বরণ, হার্ড ব্রেক কষা ইত্যাদি করার সময় অনেক বেশি জ্বালানী খরচ হয়। অতএব মাঝারী গতিতে গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেল চালানোটা শুধুমাত্র নিরাপদ এবং বিপদমুক্তই নয়, বরং একই সাথে আপনার জ্বালানীর খরচ বাঁচাতেও অনেক বেশি সহায়কও বটে।
হালকা ওজন নিয়ে ভ্রমণ
ড্রাইভং এর ক্ষেত্রে আমাদের আরেকটি খারাপ অভ্যাস হলো গাড়িতে অনেক বেশি ওজনের মালামাল বহন করা। আপনার পরবর্তী ট্রিপ গুলো শুরু করার আগে গাড়িতে কি কি মালামাল টেনে নিয়ে যাবেন সে ব্যাপারে কিছুটা ভেবে নিন। মাঝে মাঝে আমরা আমাদের গাড়িতে এমন অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস রাখি, যেমন ব্যাগ, কিন্তু সাথে এমন কিছু জিনিসও বহন করে নিই যেগুলো আসলে গাড়িতে রাখার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় মালামাল বহন করা হলে সেটার প্রভাব আপনার বাহনটির জ্বালানী ব্যবহার, সর্বোপরি খরচের ওপরও গিয়ে পড়ে। অতএব সব সময় চেষ্টা করুন হালকা ভাবে কম ওজন নিয়ে চলাচল করতে।
এয়ার কন্ডিশনিং
একটি গাড়িতে এসি অর্থাৎ এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহারও নজরদারীতে রাখা উচিত। যেখানে প্রখর তাপমাত্রা ও অসহনীয় গরমের মৌসুমে এটা এড়িয়ে চলা একেবারেই অসম্ভব, তবুও আপনাকে সামগ্রিক ভাবে এসি এর ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে আনার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এসি চালানোর জন্য অনেক বেশি পরিমানে জ্বালানী পোড়াতে হয়! সন্ধ্যা এবং রাতের সময় জানালা খোলা রেখে গাড়ি চালান এবং বাইরের হালকা মৃদু বাতাসের ঝাপ্টা উপভোগ করুন। শীতের সময় এলে খেয়াল রাখবেন যেন অতিরিক্ত গরম বা বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া এসি ব্যবহার না করা হয়।
ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখুন
যেমনটা আমরা আগেও বলেছি, রাস্তায় চলাচলের সময় গতি সীমা অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। ঠিক তেমনই আপনার উচিত যতটা কম করে সম্ভব ব্রেক কষা। অন্যান্য গাড়ি গুলোর থেকে সব সময়ই একটি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে চলুন, যাতে করে হার্ড ব্রেক না করতে হয়। এতে করে আপনাকে বার বার নতুন করে ত্বরণ সৃষ্টি করতে হবে না। এছাড়াও, যখনই আপনি ঢাকা শহরের বেশির ভাগ এলাকায় ট্র্যাফিক জ্যাম কিংবা ট্র্যাফিক স্টপেজে আটকে যান, তখন এক মিনিটের বেশি সময় অপেক্ষা করার প্রয়োজন হলে আপনার ইঞ্জিনটি বন্ধ করে রাখুন। অচল দশায় আপনার বাহনের ইঞ্জিন চালু করে রাখলে আমাদের ধারণার চেয়ে বেশি পরিমাণ জ্বালানী খরচ হয়ে যায়। অতএব আপনি ড্রাইভার হন কিংবা একজন প্যাসেঞ্জার, লম্বা বিরতির ক্ষেত্রে সব সময় ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন কিংবা ড্রাইভারকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিন।
রাস্তা বা যাত্রাপথ নির্ধারণ
যে সমস্ত কাজ গাড়ি বা মোটর সাইকেল কেনার প্রায় সাথে সাথেই আপনাকে করতে হবে সেগুলোর মধ্যে একটি হলো আপনার কর্মস্থল, বাসা ও অন্যান্য যেসব যায়গায় নিয়মিত যাওয়া আসা করেন সেই সব যায়গায় যাতায়াতের পথ কিংবা রুট নিয়ে একটু গবেষণা করে দেখুন। এতে করে শুধু যে আপনার সময় বাঁচবে তাই না, একই সাথে প্রায় প্রতিদিন আপনি যেসব ট্রিপ দিচ্ছেন বা যাতায়াত করছেন, সেখানেও জ্বালানীর খরচও বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে। হাইওয়ের পথ, ভাঙা রাস্তা, শর্ট কাট, ট্র্যাফিক জ্যাম ইত্যাদির কথা ভেবে এমন একটি রুট বেছে নিন যা আপনার সময় ও দুরত্বের ক্ষেত্রে সর্বাধিক কার্যকরী ও উপযুক্ত। দিনের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পথ ব্যবহার করে ট্র্যাফিক জ্যাম, সিগন্যাল ইত্যাদির ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সময় বাঁচানো যায়।এছাড়াও আপনি চাইলেই বিভিন্ন জিপিএস ট্র্যাকিং সার্ভিস, যেমন গুগল ম্যাপস এর সাহায্য নিয়ে ও ব্যবহার করার মাধ্যমে সর্বনিম্ন সময়ে অল্প দুরত্ব, দ্রুততম রুট ইত্যাদি খুঁজে পেতে পারেন। আপনার পরিকল্পনা অন্যদের সাথে শেয়ার করার মাধ্যমে তাদেরকেও কিছুটা সাহায্য করতে পারবেন।
আপনার বাহনের রক্ষণাবেক্ষণ
একটি ভালো ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা বাহনের কার্যকারীতা সম্পর্কে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই, মোটর সাইকেল এবং গাড়ি উভয়ের ক্ষেত্রেই। আমাদের মধ্যে অনেকেই আমাদের বাহন গুলোকে ঠিক ভাবে যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করি না এবং এর ভালো সার্ভিসের অপব্যবহার করি। অতএব খেয়াল করে তেল বা লুব্রিকেটর পরিবর্তন, ফিল্টার পরিবর্তন ইত্যাদি থেকে শুরু করে যেকোন রকম যত্নের জন্য নিয়মিত ওয়ার্কশপ গুলোতে নিয়ে যান, যাতে করে আপনার বাহনটি দীর্ঘ দিন পর্যন্ত এর সেরা পর্যায়ে পারফর্মেন্স দিতে পারে। বিভিন্ন রকম নিয়মিত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো টায়ারে যথেষ্ট পরিমাণে বাতাস না থাকা। অতএব টায়ারের চাপ এবং টায়ারের তলগুলো পরীক্ষা করিয়ে নিন কিছু দিন পর পরই। যদি আপনার বাহনের ইঞ্জিন সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করানো হয়ে থাকে, তাহলে তা কম জ্বালানী শক্তি ব্যবহার করবে এবং আপনার রাইড গুলোতে ভালো পাওয়ারের পারফর্মেন্স দিতে পারবে। অতএব আপনার টায়ারগুলোকে একই সমতলে রাখুন, ফিল্টার, তেল, স্পার্ক প্লাগ ইত্যাদি সময় মত পরিবর্তন করুন, যাতে করে আপনার গাড়ি থেকে লম্বা সময় পর্যন্ত সেরা পারফর্মেন্স পেতে পারেন।
হাইব্রিড গাড়ির উঠতি জনপ্রিয়তা
এতক্ষণে আমরা যা বুঝে ফেলেছি, তা হলো এই যে জ্বালানীর পেছনে হওয়া খরচ কমানোর জন্য সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে জ্বালানীর ব্যবহার ও অপচয় কমানো। অতএব আমরা সব সময়ই পরামর্শ দেব এমন একটি বাহন ক্রয় ও ব্যবহার করুন যা এর গ্যাস বা তেলের সাপেক্ষে ভালো মাইলেজ দেয়ার জন্য সুপরিচিত। অনেকেই অটোমেটেড পরিবহনের তুলনায় ম্যানুয়াল গাড়ি চালানোটাই বেশি পছন্দ করেন, কেননা একটি ম্যানুয়াল গাড়িতে জ্বালানীর কার্যকারিতা অনেক বেশি। এছাড়াও ভালো পরিমাণ মাইল প্রতি লিটার জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষমতা সম্পন্ন এমন অনেক সাশ্রয়ী মূল্যের যানবাহন বাজারে রয়েছে, যেগুলো বাহ্যিক চেহারা দেখে গাড়ি কেনার চেয়ে অধিক লাভজনক প্রমাণিত হয়।
বাংলাদেশে একটি ট্রেন্ডের জনপ্রিয়তা অতি দ্রুত বেড়েই চলেছে আজকাল। তা হলো ইলেক্ট্রিক বা হাইব্রিড গাড়ির বেচা কেনা। আজকাল সাধ্যের মধ্যে একটি জ্বালানী সাশ্রয়ী গাড়ির মডেল খুঁজে পাওয়া বেশ সহজ, আগে হয়ত যা আমাদের প্রত্যাশা ও কল্পনার বাইরে ছিলো। অতএব বাংলাদেশের বেশির ভাগ গাড়ির মালিকরা বর্তমানে বড় মাপের উচ্চমূল্যের গাড়ি এড়িয়ে চলার কথা ভাবছেন এবং জ্বালানী সাশ্রয়ী, আকারে ছোট, হাইব্রিড মডেলের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন।
নতুন কিংবা ব্যবহৃত হাইব্রিড মডেলের গাড়ির বেচা কেনা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে এগুলোর জ্বালানী মিতব্যয়িতা এবং সামগ্রিক ভাবে কম মূল্যের বাহন হওয়া। এছাড়াও বাংলাদেশের সরকার হাইব্রিড গাড়ির মডেল গুলোর উপর ট্যাক্স কিছুটা হালকা করে দিয়েছেন। ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভেনিউ অনুযায়ী ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে হাইব্রিড গাড়ি গুলোর মধ্যে ১৬০০ সিসি পর্যন্ত মডেলগুলোর উপর পরিষেবা শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে ৫%। তার উপর ১৬০০ সিসি এর উপরের মডেলের হাইব্রিড গাড়িগুলোতে ট্যাক্স এখন ১৫% কমে গিয়ে মাত্র ৪৫% হয়েছে। আর ২০০০ সিসি এর উপরে থাকা মডেলগুলোর ক্ষেত্রে ১৫০% থেকে কমে গিয়ে এখন মাত্র ৬০% হয়েছে।
বিভিন্ন গাড়ি আমদানীকারক এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী হাইব্রিড এবং ইলেক্ট্রিক গাড়ি এদেশে গাড়ির ভবিষ্যতে পরিণত হবে এবং বর্তমান সময়ের মার্কেটপ্লেস গুলো এই ট্রেন্ডের সত্যতা ধরে রেখেছে। নতুন গাড়ির মালিকদের চাহিদা পূরণের জন্য এই গাড়ি গুলোর আমদানী বেড়ে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, যারা বর্তমানে সক্রিয় মাত্রায় বাংলাদেশে জ্বালানী সাশ্রয়ী যানবাহন কেনার কথা ভাবছেন।
হাইব্রিড এবং ইলেক্ট্রিক গাড়ির একটি বড় অসুবিধার দিক হচ্ছে এদের লভ্যতা এবং রিপ্লেসমেন্ট ব্যাটারীর রক্ষনাবেক্ষণ করানো, গাড়ির দাম যেমনই হোক না কেন। হাইব্রিড গাড়িগুলোর ব্যাটারি যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনও পড়ে বেশি। এই ব্যাটারি গুলোর উৎপাদন স্থানীয় ভাবে শুরু করা হলে এই অসুবিধা অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশে আরো বেশি দূষণমুক্ত রাস্তাঘাট এবং সহনীয় ট্র্যাফিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অতএব আপনার ও আপনার পরিজনদের জন্য আরো বেশি জ্বালানী সাশ্রয়ী একটি সমাধান পাওয়ার জন্য বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন Bikroy.com এ ব্রাউজ করে খুঁজে নিন নতুন ও ব্যবহৃত হাইব্রিড গাড়ি, ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন গাড়ি এবং অন্যান্য বিভিন্ন বাহন যেমন মোটর সাইকেল ইত্যাদি!
উপসংহার
আপনার বাহনটিতে জ্বালানী কম ব্যবহার ও পোড়ানোর মাধ্যমে জ্বালানীর পেছনে খরচ কমিয়ে আনার অনেক রকম উপায়ই আপনার হাতে রয়েছে। অতএব স্মার্ট হউন এবং কম জ্বালানী ব্যবহার করে জ্বালানীর খরচ বাঁচান। তাৎক্ষণিক পরামর্শ হিসেবে আমি আপনাদের সুপারিশ করবো যে আপনারা এমন একটি বাহন কিনুন যা নিজেই জ্বালানী সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ ড্রাইভিং এর চর্চা ও অভ্যাস গড়ে তুলুন। একই সাথে আপনার গাড়ি কিংবা মোটর সাইকেলটি রক্ষণাবেক্ষণ করার মাধ্যমে আপনার জ্বালানীর সর্বশেষ ফোঁটা পর্যন্ত এর পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। রাস্তার অবস্থা, গাড়ির অবস্থা ইত্যাদির দিকে নজর রাখুন এবং রাস্তায় আপনার অভ্যাস গুলোর সাথে মোকাবিলা করার একটি মোক্ষম বুদ্ধিদীপ্ত উপায় খুঁজে বের করে নিন, আর সেই থেকে আপনার জ্বালানী খরচ কমিয়ে সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত সাশ্রয় করুন।
যেখানে জ্বালানীর খরচ কমানোর আরো অনেক উপায়ই আমাদের হাতে রয়েছে, সেখানে আপনার পছন্দের সেরা উপায়টি আমাদের কমেন্ট সেকশনে লিখে সবার সাথে শেয়ার করুন। বাংলাদেশের রাস্তায় দূষণ সৃষ্টিকারী সমস্যাগুলোর মধ্যে জ্বালানীর অপচয় অন্যতম, অতএব দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জ্বালানীর অপচয় রোধ করার চেষ্টা করুন এবং পাশাপাশি আপনার কষ্টের উপার্জিত টাকাও বাঁচিয়ে ফেলুন।
যেকোন ব্যক্তি কিংবা ব্যবসার জন্য, হোক তা বড় কিংবা ছোট, জ্বালানীর পেছনে হওয়া খরচ অন্যান্য বিভিন্ন বড় খরচগুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনি হয়ত জ্বালানীর দামকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না, কিন্তু কীভাবে সেই জ্বালানী ব্যবহার করবেন সেটার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি আপনার হাতে। অতএব আজকে আমাদের উল্লেখ করা টিপস গুলো কাজে লাগিয়ে দেখুন এবং বাংলাদেশে ড্রাইভ করার সময় জ্বালানীর খরচ যথাসম্ভব কমিয়ে আনুন।
আজই ভিসিট করুন Bikroy.com আর খুঁজে নিন বাংলাদেশে বিক্রির জন্য শত শত নতুন এবং ব্যবহৃত গাড়ি ও মোটর সাইকেলের বিজ্ঞাপন।