কোন সাইজের ফ্ল্যাট খুঁজছেন? অ্যাপার্টমেন্ট কিনুন ভেবেচিন্তে
বাড়ি হয়তো না, কিন্তু নিজের একটা ফ্ল্যাট হোক এমনটা চান না এরকম হয়তো খুব কম লোকই আছেন। যতই দিন গড়াচ্ছে, রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে ফ্ল্যাটের প্রতি মানুষের আকর্ষণ যেন বেড়েই চলেছে। প্রায় সারা জীবনের সঞ্চয় জমিয়ে ফ্ল্যাট কেনা প্রায় সব মধ্যবিত্তদেরই স্বপ্ন।
তবে শুধু টাকাই না, ফ্ল্যাট কেনার আগে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে নানান জিনিসের প্রতি। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের জন্য সঠিক আকারের ফ্ল্যাট খুঁজে নেওয়া। ফ্ল্যাট কেনার পর যদি দেখা যায় সেটি পরিবারের সদস্যদের জন্য উপযুক্ত নয় – তাহলে বিপদে পড়তে হবে।
আজকের দিনে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ফ্ল্যাট বানিয়ে থাকে। তাই একজন ক্রেতা হিসেবে খুব একটা বেগ পেতে না হলেও কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখলে আপনার ফ্ল্যাট কেনা হবে আরও বেশি সহজ ও সাবলীল। তাহলে চলুন দেখে আসা যাক আপনার জন্য কেমন আকারের ফ্ল্যাট প্রয়োজন, এবং ২০২২ সালে ফ্ল্যাটের দাম সম্পর্কে বিস্তারিত।
চেষ্টা হোক সাধ্যের মধ্যে শখ পূরণের
আপনার যেমন সাধ্য সেই দাম এবং আকারের মধ্যেই ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবুন। ধরে নিন আপনার বাজেট এক কোটি টাকা, কিন্তু আপনি হোম লোন নিয়ে পাঁচ কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনে ফেললেন – সেক্ষেত্রে আপনাকে দীর্ঘদিন সেই লোন পরিশোধ করে যেতে যেমন হবে, তেমনি টাকা পরিশোধ না করতে পারলে এক সময় বিক্রিও করে দিতে হতে পারে পছন্দের ফ্ল্যাটটি।
তাই আপনার বাজেটের মধ্যেই ফ্ল্যাট কিনতে হবে, এমন চিন্তাভাবনা রাখুন। ঢাকা শহরে প্রায় ৫০ লাখ থেকে শুরু করে ২০ কোটি টাকার ফ্ল্যাটও খুঁজে পাওয়া যাবে অনায়াসেই। আপনি যদি গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় থাকতে চান সেক্ষেত্রে ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পড়বে। আবার অন্যদিকে কম দামে ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, আশকোনার মতো কিছু এলাকায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বর্গফুটের মধ্যেই পেয়ে যাবেন এই দাম।
ঢাকা শহরে বেশি আগ্রহ ছোট ফ্ল্যাটের প্রতি
ফ্ল্যাট কেনার সময় বাজেট যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ এখানে। ঢাকা শহরে ছোট ফ্ল্যাটের চাহিদা তুলনামূলক ভাবে বেশি। Bikroy থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও অনেকে কম দামে নতুন ও পুরোনো ফ্ল্যাট খুঁজে থাকেন, তারাও দেখতে পারেন ছোট আকারের এসব ফ্ল্যাট বা পুরোনো ফ্ল্যাট এর বিজ্ঞাপনগুলো।
গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে বর্তমানে রিয়েল এস্টেস্ট ডেভেলপাররাও এই আয়তনের ফ্ল্যাট তৈরির প্রতি বেশি ঝুঁকছে। দুই-তিন বেডরুমের এই সকল ফ্ল্যাট ছোট পরিবারের জন্য বেশ উপযুক্ত। রাজধানীর অনেক এলাকাতেই পাওয়া যাবে ছোট আকারের ফ্ল্যাট, যার মধ্যে রয়েছেঃ মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ক্ষিলখেত, উত্তরা, লালমাটিয়া সহ আরও বেশ কিছু জায়গা।
পরিবারের সদস্য অনুযায়ী মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট
অনেকেই আছেন যারা বাবা-মায়ের সাথে বাস করেন, সাথে থাকে নিজের পরিবারও – এমন সময় মূলত প্রয়োজন মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের। ১৫০০ থেকে ২৫০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটগুলোকে মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট ধরা হয়ে থাকে। ৩ থেকে ৪টি বেডরুম, ২টি ওয়াশরুম, ড্রইং, ডাইনিং, কিচেন থাকে এসব ফ্ল্যাটে। পুরোনো ফ্ল্যাট বা কম দামে ফ্ল্যাট কেনার কথা ভেবে থাকলে মাঝারি ফ্ল্যাট কিছুটা সাশ্রয়ী হতে পারে।
৫ থেকে ৭ জন সদস্যের জন্য আদর্শ এসব ফ্ল্যাট, চাইলে আরও ২/১ জন থাকা যেতে পারে অনায়াসেই। ঢাকার যেসব এলাকায় মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট সংখ্যা বেশি, তার মধ্যে রয়েছেঃ ধানমন্ডি, উত্তরা, কলাবাগান, লালমাটিয়া, নিকুঞ্জ, মিরপুর, বসুন্ধরা সহ আরও কিছু এলাকা।
বড় পরিবারের জন্য বড় আকারের ফ্ল্যাট
যারা একই সাথে বাবা-মা, ভাই-বোন সহ অর্থাৎ জয়েন্ট ফ্যামিলি নিয়ে থাকার কথা ভাবছেন, তাদের ক্ষেত্রে বড় ফ্ল্যাটই প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত। বড় ফ্ল্যাটের আয়তন ২০০০ বর্গফুট থেকে শুরু হয়।
ঢাকা শহরের বেশিরভাগ বড় ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫টি বেডরুম সহ ৩/৪টি ওয়াশরুম, ডাইনিং, ড্রয়িং, কিচেন এবং লাইব্রেরি বা স্টাডিরুমও থাকে। পাশাপাশি এ ধরণের ফ্ল্যাট হয় বেশ খোলামেলা। ঢাকার ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা, বারিধারা, সহ নানা জায়গায় খোঁজ মিলবে বড় আকারের ফ্ল্যাটের।
ফ্ল্যাট কেনার আগের সতর্কতা
যেকোনো আকারের ফ্ল্যাট কেনার আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন সেটির নকশা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক (রাজউক) অনুমোদিত। ফ্ল্যাটটির নকশা অনুমোদিত না হলে তা যেকোনো মুহূর্তেই ঝামেলায় পড়তে পারে। রাজউক-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই জেনে নেওয়া যাবে এই তথ্য। একই ভাবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ এলাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে থাকে।
এছাড়াও যেই প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবছেন তারা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (রিহ্যাব) সদস্য কি না তা নিশ্চিত হয়ে নেবেন, এতে করে পরবর্তীতে সমস্যা হলে তা এড়ানো সহজ হবে। সর্বোপরি আপনার ফ্ল্যাট কেনার চুক্তিপত্র একজন দক্ষ আইনজীবীকে দিয়ে যাচাই করে নেবেন। চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও ভালোভাবে দেখে নেবেন এই সময়।
শেষকথা
সারা জীবনের সঞ্চয় জমিয়ে ফ্ল্যাট কিনছেন, তাই কেনার আগে আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা, আপনার বাজেট, ফ্ল্যাটের অবস্থান এসব কিছু মাথায় রেখে ফ্ল্যাট কিনুন।
নতুন ও পুরোনো ফ্ল্যাট সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন ও বর্তমান প্রপার্টির মার্কেট সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস- Bikroy.com।
হ্যাপি বায়িং!