করোনাকালে ঘরে বসে কাজঃ যা যা জেনে রাখা প্রয়োজন
নতুন করে আবার শুরু হওয়া মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অনেক সংস্থা বাধ্যতামূলক ভাবে বাসা থেকে কাজ করার নীতি অবলম্বন করছে। ফলস্বরূপ, আমাদের মধ্যে অনেকেরই কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের চাকরির বাজারে বেশির ভাগ সংস্থা বাসা থেকে কাজ করবে এমন কর্মী খুঁজছে এমনকি টিউটর, অনুবাদক, ভার্চুয়াল সহায়ক থেকে কপিরাইটার পদের জন্যও। আপনি যদি আপনার কাজকে আরও গতিশীল এবং প্রতিযোগিতামূলক করতে চান তবে বাড়ি থেকে কীভাবে কাজ করবেন তাতে গুরুত্ব আরোপ করুন, তাই আমরা আজ কিভাবে বাড়িতে বসে কাজ করবেন সে বিষয়ে কয়েকটি সহায়ক টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।
বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ
কোভিড -১৯ এর কারণে, অনেকে প্রথমবারের মতো বাড়ি থেকে কাজ করছেন। ফ্রিল্যান্সারদের মতো অন্যরা যারা দীর্ঘকাল ধরে এটি করে চলেছে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, বাড়ি থেকে কাজ করা আপনার জীবনে বা আপনি যাদের সাথে জীবনযাপন করেন তাদের ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে।
সুবিধা
বাড়ি থেকে কাজ করা প্রত্যেককে উপকৃত করে: আপনাকে, আপনার পরিবারকে এমনকি আপনার কাজের ক্ষেত্রকেও। আপনি যদি পজিটিভ এবং আশাবাদী মানসিকতা নিয়ে থাকেন তবে আপনি একটি উৎপাদনশীল এবং সন্তোষজনক হোম লাইফ কাটাতে পারেন – যা আপনি পাচ্ছেন দৈনন্দিন জীবনের যাতায়াতের ঝামেলা ছাড়াই।
চ্যালেঞ্জ
তাছাড়া এর কিছু সমস্যার দিক ও আছে। যেমন- কর্মীরা ঠিক ভাবে কাজ করছে কি না তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ সর্বদাই উদ্বিগ্ন থাকে। তাছাড়া যারা দূরে বা একা বসবাস করেন অনেকেই একাকী বোধ করতে পারেন। এ কারণেই সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং নিজের অনুভূতি পোষণ করা জরুরি।
বাড়িতে নিরাপদে কীভাবে কাজ করবেন
১. একটি নির্দিষ্ট স্থানকে কাজের জন্য নির্ধারণ করুন
আপনি যদি আপনার নির্ধারিত কাজগুলি সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই একটি কার্যকর ওয়ার্কস্পেস নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া আপনার কাজের প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস যেমন- ল্যাপটপ, ফাইল, চার্জার ইত্যাদি সস্থির সাথে কাজ করার জন্য নির্ধারিত জায়গায় রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
আপনি যদি প্রতিদিন নির্দিষ্ট কোনো একটি সময়ে অফিসে যাওয়া আসায় অভ্যস্ত থাকেন , এক্ষেত্রে কাজের স্থান বাড়ির অন্যান্য জায়গা থেকে থেকে কিছুটা দূরে/আলাদা করে রাখুন যা আপনাকে প্রতিদিন অফিস এ যাওয়ার মতো অনুভূতি দিবে।
এসকল ক্ষেত্রে কিছুটা বিনিয়োগ করে নিতে পারেন যা আপনাকে একটি ভালো কাজের পরিবেশ দিতে সহযোগিতা করবে তা হতে পারে একটি ভালো মানের অফিস চেয়ার এবং টেবিল। যদি আপনার কাছে পর্যাপ্ত বাজেট না থাকে তবে এমন একটি জায়গা নিশ্চিত করুন যেখানে আপনি আরামে বসে কাজ করতে পারেন। আপনি যদি অনেকের সাথে বসবাস অবস্থায় থাকেন সেক্ষেত্রে কাজ করার সময় সবার কাছ থেকে, বিশেষত পোষা প্রাণী থাকলে যথাসম্ভব কাজের স্থান থেকে দূরে রাখুন।
২. কাজের সময় নির্দিষ্ট রাখুন
আপনি কখন কাজ করছেন এবং কখন কাজ করছেন না সে সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার হওয়া উচিত, আপনি যদি আপনার সময়সূচিটি সামঞ্জস্য না রাখেন, তবে আপনি কাজটিকে উপভোগ করতে পারবেন না । নিজের এবং আপনার বসের জন্য প্রতিদিনের একটি সময় নির্ধারণ করলে আপনি আপনার কাজকে দ্রুততার সহিত গুছিয়ে উঠতে পারবেন। এটি আপনার সমস্ত কাজ সঠিক ভাবে শেষ করতে সাহায্য করবে এবং অন্যদের পক্ষে আপনার সাথে যোগাযোগ করাকে সহজ করে তুলবে।
ঘরে বসে কাজের সময়সূচী তৈরি করার সময়, নিম্নলিখিত বিবেচনা গুলি মাথায় রাখুনঃ
- যখন আপনার বসের আপনাকে প্রয়োজন হবে।
- আপনার সহকর্মী এবং গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগের সময়।
- দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় যখন আপনি সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল।
৩. কাজের সময় এবং ব্যক্তিগত সময় আলাদা রাখুন
ঘরে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে ঠিক আপনার অফিসের কাজ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, মনে রাখতে হবে আপনার পরিবারকেও সময় দেয়া ততটাই গুরুত্বপূর্ণ । চেষ্টা করুন প্রত্যেকটি বিষয়কে সমান ভাবে গুরুত্ব দেয়ার এবং প্রতিদিন নিজের জন্য অফিসের কাজের এবং পরিবারের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে রাখতে।
স্বাস্থ্যকর কর্মজীবন এর ভারসাম্য বজায় রাখা এই মুহূর্তে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় একটি কাজ কারণ এটি আপনাকে কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীল থাকতে এবং আপনার মানসিক চাপ হ্রাস করতে সাহায্য করবে।
৪. দৈনন্দিন কাজের একটি পরিকল্পনা করুন
দিনের জন্য আপনার লক্ষ্য গুলি কী, আপনি এটি কীভাবে শেষ করতে চান, কতক্ষণ সময় নেবেন এবং আপনি কাজ শুরু করার আগে অতিরিক্ত সময় পেলে আপনি কিসের দিকে মনোনিবেশ করবেন তা নিশ্চিত করুন।
বিছানায় যাওয়ার আগে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে পরের দিনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উপকারী হবে।
আপনার পরিকল্পনায় নিম্নলিখিতগুলি বিষয়গুলি বিবেচনা করুন:
- প্রথমে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের কাজগুলি করুন।
- সময় অনুযায়ী দিনের কাজ গুলিকে নির্ধারণ করুন, সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন কাজটি সঠিক সুযোগ এবং রিসোর্স সহ করুন।
- নিজের জন্য সময়ে সময়ে বিরতি রাখুন।
৫. কাজের স্থানে রুমমেট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন
বাড়ি থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে কাজের স্থানে রুমমেটদের প্রবেশ করতে না দেয়ায় উত্তম বিশেষত শিশু, পোষা প্রাণী, পরিবারের সদস্য বা রুমমেটদের জন্য প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ করুন। আপনি কাজ করার সময় আপনাকে একা থাকতে দিতে তাদের উৎসাহিত করুন যাতে আপনি কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে আপনার রুমের দরজায় কোনো নোটিশ টানিয়ে রাখতে পারেন।
৬. সামাজিকীকরণ করতে ভুলে যাবেন না
কর্মক্ষেত্রের প্রত্যেকে যখন একই সময়ে বাড়ি থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা আমাদেরকে সাধারণ যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত করে , এর ফলে আমরা অনেকেই কিছুটা হতাশায় পরে যাই এবং কাজের মাঝে একঘেয়েমি চলে আসে।
সুতরাং এর থেকে বাঁচতে, আপনার সহকর্মীদের সাথে স্ল্যাক, ফোন কল, টেক্সট, জুম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন। সহকর্মীদের সাথে সাপ্তাহিক ছুটির দিন গুলিতেও ক্যাজুয়াল আড্ডা চালিয়ে যেতে পারেন। এই ছোট খাটো যোগাযযোগ আপনাকে স্বতঃস্ফূর্ত রাখতে সাহায্য করবে।
৭. নেগেটিভ সংবাদ দ্বারা বিচলিত হবেন না
বাড়ি থেকে কাজ করার সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি, বিশেষত যারা এতে অভ্যস্ত না, তা হলো সংবাদ। সংবাদ আমাদের বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বিচলিত করার কারণগুলির একটি। আপনি যদি সর্বদা করোনাভাইরাস এর খবর নিতে থাকেন তা আপনাকে প্রতিনিয়ত বিচলিত করে তুলবে। যদিও এই সকল বিষয়ে আপডেটেড থাকা ভালো, কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, এই অতিরিক্ত মাত্রায় খবর আপনাকে অস্থির করে তুলতে পারে।
সুতরাং, প্রতিনিয়ত খবর না নিয়ে মাঝে মধ্যে খবর নিন, বিশেষ করে দিনের অলস সময় গুলোতে এই ধরণের নিউজ দেখুন। নিজের কাজের সময় গুলোতে না জানাই ভালো।
শেষ কথা
আপনার কর্মক্ষেত্রকে আপনার বাড়িতে স্থানান্তরিত করা কঠিন হতে পারে। তবে আপনার সুন্দর একটি রুটিন এবং কর্মক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্য রাখলে ঘরে বসেই আপনি একটি উৎপাদনশীল দিন কাটাতে পারেন। উপরের টিপসগুলো থেকে বেছে নিতে পারেন যে, কিভাবে ঘরে বসে আপনি আপনার কর্মক্ষেত্র এবং আপনার পরিবারকে একটি সুন্দর সময় উপহার দিতে পারেন।