পড়ালেখা করার পাশাপাশি কিভাবে চাকরি করবেন?
জব। না আমি অ্যাপেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবের সিনেমার কথা বলছি না, আমি প্রকৃত জব অর্থাৎ চাকরির কথা বলছি, আপনার মত হাই স্কুল টিন এজারের জন্য একটি সত্যিকারের জব। প্রধান টিপগুলো সম্পর্কে আলোচনা শুরু করার আগে আমি প্রথমেই বলে নিতে চাই যে কেন স্কুলে থাকা অবস্থায় আপনি চাকরি খুঁজবেন। কিছু বাড়তি পকেট মানি আয় করা ছাড়াও, কর্মক্ষেত্রে পদার্পণ করলে একজন ব্যক্তি কিভাবে সময় পরিচালনা করতে হয় তা শিখতে পারেন, দায়িত্ব নেয়া শিখতে পারেন এবং একটি দলের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। এটি টিন এজারদেরকে দায়িত্ববান পরিণত বয়স্ক মানুষ হতে শেখায় এবং এটি পরিণত বয়সে পদার্পণ করার একটি ধাপ। বেশিরভাগ ছাত্রদের জন্যেই একটি ফুল-টাইম জব সম্ভবপর অথবা যুক্তিযুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। পার্ট-টাইম বা বাসা থেকে করা যায় এমন জব তাদের জন্য আকর্ষণীয়।
এখানে ৭ টি টিপ আলোচনা করা হল যা আপনাকে জব পেতে এবং জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে সাহায্য করবে।
১. আপনি কি ধরণের কাজে পারদর্শী তা খুঁজে বের করুন
অনেকেই হয়ত মনে করে থাকবেন এটি নতুন করে বলার কি আছে, তবে কাজ খোঁজার পূর্বে এটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার পারদর্শিতা এবং গুণগুলো খুঁজে বার করার চেষ্টা করুন। এমন কিছু খুঁজুন যেগুলো আপনি আপনার ইন্টারভিউয়ারের কাছে বিশেষভাবে আলোকপাত করতে পারবেন। আপনার যদি লেখার দক্ষতা ভাল থাকে তবে সেটা কাজে লাগান! আপনি অঙ্কে বা হিসাবনিকাশে ভাল হয়ে থাকেন তবে সেটও বলুন। সর্বোপরি আপনার প্রথম চাকরিটি পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করবে আপনি বর্তমানে কি ধরণের কাজে দক্ষ এবং আপনার বর্তমান দক্ষতাগুলো কিভাবে আরও বিবর্ধন করা যাবে তার উপর। এই ব্যাপারে আরও সাহায্য পেতে আমাদের সাম্প্রতিক প্রবন্ধ শিক্ষা জীবনে পার্ট-টাইম চাকরির ভূমিকা সম্পর্কে জেনে নিন।
আরও দেখুনঃ
- কিভাবে শিক্ষার্থীরা একজন প্রোগ্রামার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন?
- শিক্ষার্থীদের জন্য টিপস : কিভাবে ব্যবসায় ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন?
- বাংলাদেশে শিক্ষাজীবনের সেরা ক্যারিয়ার অপশন কাস্টমার সার্ভিস চাকরি
২. একটি মানসম্মত জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করুন
একটি জীবনবৃত্তান্ত মূলত আপনার, আপনার দক্ষতা এবং গুনের একটি বৃত্তান্ত। এখানেই আপনি নিজেকে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে পারবেন এবং আপনার দক্ষতা ও গুণগুলো দেখাতে পারবেন। আপনি যদি ভাল শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, স্কুল পারফেক্ট হয়ে থাকেন, স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে থাকেন, ইন্টারশিপ করে থাকেন তবে এ সমস্ত কিছু আপনি আপনার জীবন বৃত্তান্তে সংযোজন করবেন। অনেক চাকরিদাতাই হয়ত জীবনবৃত্তান্ত দেখতে চাবেন না কিন্তু আপনি যদি একটি জীবনবৃত্তান্ত দিতে পারেন তবে আপনি অন্য আবেদনকারীদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। এ ক্ষেত্রে কিভাবে সুন্দর একটি জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) লিখতে হয় এই টিপস গুলো দেখে নিন।
৩. সঠিক স্থানে চাকরি খুঁজুন
আপনার হয়ত একটি ভাল জীবনবৃত্তান্ত আছে, আপনার দক্ষতা এবং গুণগুলো আপনি জানেন কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না যে কোথায় চাকরির জন্য আবেদন করতে হবে। সৌভাগ্যক্রমে এই ২০১৭ সালে চাকরির সুযোগ সন্ধানের কাজ অনেক বেশি সহজ। বাংলাদেশে চাকরি খোঁজার স্বনামধন্য কিছু ওয়েবসাইট, যেমন, Bikroy-এ চাকরি খুঁজুন। সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপগুলোতে চাকরির সন্ধান করুন এবং একটি লিস্ট তৈরি করুন। আপনি যদি এমন কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খুঁজে পান যেখানে আপনি আপনার দক্ষতা এবং গুণগুলো কাজে লাগাতে পারবেন সেগুলোকেও আপনার লিস্টের অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যদি চাকরি খোঁজা নিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তবে সাহায্য চাইতে ভয় পাবেন না। আপনার আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক-শিক্ষিকা বা বন্ধুদের কাছে আপনি সাহায্য চাইতে পারেন যারা হয়ত আপনাকে কোন একটি কোম্পানিতে রেফার করতে পারে। যত বেশি যায়গায় আপনি আবেদন করবেন তত ভাল চাকরি পাবার সম্ভাবনা আপনার থাকবে।
৪. নমনীয় হন, মানিয়ে নেবার মানসিকতা রাখুন
আপনি যখন আপনার প্রথম চাকরিটি করতে যাবেন তখন আপনি আপনার চাকরি পাবার সুযোগটি যথাসম্ভব নিশ্চিত করতে চাইবেন। এর অর্থ হল আপনাকে আপনার সময় যথাযথভাবে সমন্বয় করতে হবে এবং কাজের প্রয়োজনে আপনাকে উপস্থিত থাকতে হবে। এমন কোন শর্তে যাবেন না যেখানে কাজের সময়ের অর্থ হল আপনার স্কুল বাদ দিয়ে আপনার চাকরিদাতার প্রয়োজন মেটাতে হবে। তাছাড়াও একটি এন্ট্রি-লেভেল চাকরিতে হয়ত আপনাকে এমন কিছু কাজ করতে হবে যেগুলোর অভিজ্ঞতা আপনার নেই। এমন অবস্থায় আপনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করে আপনার দায়িত্ব এড়িয়ে যাবেন না। বরং আপনি নতুন কাজটির ধারণা লাভ করার জন্য চেষ্টা করবেন। আপনি কোন কাজ প্রথমবারের মত করছেন এই বিষয়টি আপনার চাকরিদাতার কাছে লুকাবেন না।
৫. ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে যাবেন
শেষ পর্যন্ত আপনি কিছু পছন্দের কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউর ডাক পেলেন। এখন কি হবে? এন্ট্রি লেভেল চাকরির ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ খানিকটা বিস্তারিত এবং তীব্র এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইন্টারভিউয়ার আপনার সাথে কথা বলতে চাইবে আপনি কি ধরণের কর্মী হতে পারবেন তা বোঝার জন্য। এক্ষেত্রে নার্ভাস হবার কিছু নেই। ইন্টারভিউর সময়ের আরও আগে গন্তব্যে চলে যান এবং যথাযথ পোশাক পরুন। ফুল স্যুট না পরার চেষ্টা করে বিজনেস ক্যাজুয়াল লুকে যাবার চেষ্টা করুন। এটি যদি আপনার প্রথম ইন্টারভিউ হয়ে থাকে তবে আপনি যদি ফর্মাল আদর্শে কারও সাথে কথা বলার অনুশীলন করে যান তবে তা অত্যন্ত কার্যকরী হবে। আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন এবং শব্দবাহুল্য বর্জন করে প্রশ্নের উত্তর দিন। কথা বলার সময় তোতলাবেন না এবং চলিতভাষার শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করবেন না।
৬. অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাজ করুন, টাকার জন্য নয়
আপনার চাকরিদাতা হয়ত আপনাকে ছয় ফিগার স্যালারি অফার করবে না এবং আপনিও তেমনটা আশা করবেন না। আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো, প্রথম চাকরিটির জন্য আপনার প্রত্যাশা কমিয়ে রাখুন। একজন কর্মী হিসেবে আপনার এই প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে শিখতে হবে। ইন্টারভিউ দিতে যাবার সময় চিন্তা করবেন না যে কত বেশি পরিমাণ স্যালারি আপনি হাঁকাতে পারছেন, বরং চিন্তা করবেন যে কত বেশি পরিমাণ অভিজ্ঞতা আপনি অর্জন করতে পারছেন। আপনি যদি আপনার চাকরিদাতাকে এই বিষয়টি বোঝাতে পারেন তবে তা আপনার চাকরি পাবার জন্যও অত্যন্ত সহায়ক হবে। বোঝার চেষ্টা করুন যে এই পর্যায়ে আপনি যত বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন তার উপকারিতা আপনার স্যালারির চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৭. চেষ্টা করতে থাকুন
আপনি যদি কিছু কোম্পানি থেকে জব অফার না পান তবে হাল ছেড়ে দেবেন না! এই প্রক্রিয়াটি এভাবেই কাজ করে। আপনি যখনই চেষ্টা করা বন্ধ করে দেবেন তখনি আপনি হেরে যাবেন সুতরাং আপনার উদ্দীপনাকে সমুন্নত রেখে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকুন। এমন সব পন্থা বের করুন যার মাধ্যমে আপনি নিজেকে একজন আকর্ষণীয় আবেদনকারীরূপে উপস্থাপন করতে পারবেন। এমন কোন চাকরি যদি থেকে থাকে যে মাইক্রোসফট অফিস টুলস ব্যবহার করার দক্ষতা থাকতে হবে তবে সেই দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করুন। এই দক্ষতাগুলো ভবিষ্যতে আপনার কাজে লাগবেই, সুতরাং নতুন দক্ষতা আয়ত্ত করা আপনার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
আপনি যদি উপরের টিপগুলো মনে রাখেন এবং মেনে চলেন, তবে অবশ্যই খুব শীঘ্রই আপনি কোন চাকরি পেয়ে যাবেন।