২০১৮ সালে বাংলাদেশে যে চাকরি গুলোর প্রধান্য থাকবে
এসেছে নতুন বছর, বদলেছে চাকরির বাজারের হাল-চাল। গত বছরের সাথে তুলনা করলে এ বছরের পরিবর্তনগুলো সহজেই লক্ষ্য করা যায়। ২০১৮ সালের বৈশ্বিক এবং বাংলাদেশের চাকরির বাজারের দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যায় যে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রযুক্তি নির্ভর চাকরির চাহিদাও বেড়েছে বেশ। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে চাকরির ধরণ এবং চাকরিতে সাফল্যের মাপকাঠি। নতুন ধাঁচের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে মানুষ। যদিও প্রযুক্তির প্রভাবে অনেক চাকরিই এখন প্রযুক্তি-নির্ভর, সব চাকরির ক্ষেত্রে আবার তা নয়।
একেক জনের কাছে কর্মক্ষেত্রে সফলতা এবং ক্যারিয়ার গোলের সংজ্ঞা একেক রকম হলেও আমরা ২০১৮ সালের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১০টি সেরা চাকরির একটি লিস্ট তৈরি করেছি। আমাদের মতে এই চাকরিগুলো আপনাদের এনে দিতে পারে একটি সফল ক্যারিয়ার। চাকরির চাহিদা, স্কিল ডিমান্ড এবং সম্ভাব্য সফলতার ভিত্তিতে এই চাকরিগুলো বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা চাকরি। যদিও এখানে কোন র্যাঙ্কের ভিত্তিতে লিস্টটি সাজানো হয়নি।
১. কাস্টমার সাপোর্ট চাকরি
আপনি যে ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করুন না কেনো, সব জায়গায় কাস্টমারই রাজা! প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে হঠাৎ করেই সব ইন্ডাস্ট্রির সব ধরণের ফিল্ডে এবং সেক্টরে বেড়েছে ব্যবসায়ের পরিধি। সব প্ল্যাটফর্মে বেড়েছে বিক্রি, সুতরাং যত বেশি কাস্টমার তত বেশি সাফল্য। একারণে কাস্টমারের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো সহজ হলেও কাস্টমারের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ। কাস্টমার সাপোর্ট চাকরি এখন কেবল মাত্র কল সেন্টারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; বরং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই বর্তমানে কাস্টমার সাপোর্টের জন্য বিশেষভাবে নিয়োজিত ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। এ ধরণের জবে চ্যাট সাপোর্ট, ই-মেইল সাপোর্ট, ভয়েস এবং ভিডিও কল সাপোর্ট ইত্যাদি কার্যক্রম রয়েছে। দেখে নিতে পারেন আমাদের সাম্প্রতিক একটি লেখা বাংলাদেশে শিক্ষাজীবনের সেরা ক্যারিয়ার অপশন কাস্টমার সার্ভিস চাকরি।
বেতনঃ নিম্ন থেকে মাঝারি
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ ভালো
২. কল সেন্টার চাকরি
কল সেন্টার ইন্ডাস্ট্রি বহুদিন ধরেই ইন্ডিয়ানরা একচেটিয়াভাবে দখল করে রেখেছিলো। এ ধরণের কাস্টমার সার্ভিস জাতীয় আউটসোর্সিং চাকরির মূল চাবিকাঠি হল ইংরেজিতে দুর্দান্ত কমিউনিকেশন স্কিল। বর্তমানে বাংলাদেশে কল সেন্টার জবের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে কারণ বাইরের কোম্পানিগুলো আউটসোর্স করার জন্য ইন্ডিয়াকে আর বেছে নিতে চাইছে না। এখন যেহেতু কাস্টমারদের সেলফ-সার্ভিসের সুযোগ রয়েছে সেহেতু কল সেন্টারগুলোতে আরও অ্যাডভান্সড সেবা প্রদান করার দিকে মনোনিবেশ করছে। যদিও ২৪ ঘণ্টা দিন-রাত সার্ভিসের কারণে এ ধরণের চাকরির সময়সূচি কিছুটা উদ্ভট, কল সেন্টারে চাকরির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বেতনঃ নিম্ন থেকে মাঝারি
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ মোটামোটি
৩. ডাটা এন্ট্রি চাকরি
ডাটা এন্ট্রি চাকরির চাহিদা বাংলাদেশে বরাবরই বেশি ছিল, বরং বর্তমানে এই চাহিদা আরও বহুগুণে বেড়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় সেক্টরেই ব্যাপক ব্যবসায়িক প্রসারের কারণে এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশনের কারণে ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিষ্টদের চাকরির সুযোগ বেড়েছে বহুগুণ। এই চাকরি সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা আছে। অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশে এ চাকরির কোন ভালো ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু বাস্তবতা তার ঠিক বিপরীত। এই চাকরি শুধুমাত্র ডাটা টাইপিং-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। টেকনিক্যাল ডাটা, প্রেজেন্টেশনের জন্য বিভিন্ন তথ্য রি-অ্যারেঞ্জ করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিষ্টরা করে থাকেন।
বেতনঃ নিম্ন থেকে মাঝারি
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ মোটামোটি
৪. সেলস এবং মার্কেটিং চাকরি
সেলস এবং মার্কেটিং চাকরির চাহিদা বাংলাদেশে সবসময়েই বেশি। অর্থনৈতিক অবস্থা যেমনই হোক না কেন, এ ধরণের চাকরির চাহিদা কখনই কমেনি। অর্থনৈতিক মন্দা বা সমৃদ্ধি যা-ই হোক, সেলস এবং মার্কেটিং জব সবসময়ই পাওয়া যায়। এই চাকরির চাহিদা অনেক বেশি এবং কোম্পানিগুলো সবসময়ই অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের তুলনায় সেলস এবং মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে আরও বেশি বেশি কর্মী নিয়োগ দিতে আগ্রহী থাকেন। কেননা একমাত্র সেলস এবং মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট থেকেই সবচেয়ে বেশি নিশ্চিত আর্থিক টার্ন-ওভার এসে থাকে। আমাদের আরও একটি প্রবন্ধ দেখুন কিভাবে ব্যবসায় ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন?
বেতনঃ নিম্ন থেকে মাঝারি
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃভালো
৫. অনলাইন মার্কেটিং চাকরি
অনলাইন মার্কেটিং চাকরি নিশ্চিতভাবেই ২০১৮ সালের সবচেয়ে বেশি চাহিদার চাকরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী স্কিলড অনলাইন মার্কেটারের ডিমান্ড ক্রমাগত বেড়ে চলছে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এই চাকরির অনেক নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। হোক প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস, রিটেইল কিংবা হোলসেল, অনলাইন মার্কেটিং-এর চাহিদা সবসময়েই ক্রমবর্ধমান।
বেতনঃ নিম্ন থেকে মাঝারি
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ ভালো
৬. পার্ট টাইম চাকরি
রিসিপশনিস্ট, ওয়েইটার, ক্যাশিয়ার, ট্রান্সপোর্টেশন, ডেলিভারি এবং অন্যান্য কাজের জন্য বাংলাদেশে পার্ট টাইম জবের সুযোগও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কিছু কিছু বিষয় যেমন চাহিদার আধিক্য এবং ফ্লেক্সিবিলিটি বাংলাদেশের পার্ট টাইম জবের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। শিক্ষার্থী বা সাধারণ চাকরিজীবী প্রায় সবাই কিছু অতিরিক্ত আয়ের জন্য এ ধরণের চাকরি করতে পারেন। বাংলাদেশে পার্ট টাইম চাকরির আধিক্যের কারণে অনেকেই এটিকে ফুলটাইম অপশন হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। আরও দেখে নিন শিক্ষা জীবনে পার্ট-টাইম চাকরির ভূমিকা।
বেতনঃ নিম্ন থেকে মাঝারি
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ মোটামোটি
৭. আইটি এবং টেলিকম চাকরি
প্রযুক্তিগত চাহিদা সবসময় থাকবে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন আমাদের আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতেও উদ্ভাবনের এই চাকা চলতেই থাকবে। আইটি-এর একচেটিয়া চাহিদা সব সেক্টরেই সবসময় একই রকম থাকবে। এই কারণে বাংলাদেশে আইটি এবং টেলিকম সেক্টরে চাকরির সুযোগ অনেক বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে বলতে গেলে আইটি সাপোর্ট ছাড়া কোন কাজ করা সম্ভব নয়। যে কোন অফিসিয়াল কাজেই আইটি সাপোর্ট প্রয়োজন পরে। আইটি স্কিল প্রতিটি কোম্পানির জন্য অ্যাসেটের মত। চাকরিদাতারাও শুধুমাত্র আধুনিক স্কিলসেটসম্পন্ন কর্মীদেরই নিয়োগ দিতে আগ্রহী থাকেন। এ ক্ষেত্রে আরও দেখুন কিভাবে শিক্ষার্থীরা একজন প্রোগ্রামার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।
বেতনঃ নিম্ন থেকে মাঝারি
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ ভালো
৮. ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি
প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে সারা বিশ্বেই ক্রমেই বেড়ে চলেছে ইঞ্জিনিয়ারদের কদর। বাংলাদেশেও ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির চাহিদা অনেক বেশি থাকবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। অন্ততপক্ষে আগামি দশকের জন্য হলেও ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা এমনটিই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটিই একমাত্র সেক্টর যেখানে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম। তবে এই সেক্টরের একটি বড় সমস্যা হল ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরিজীবীদের স্যালারি তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
বেতনঃ উচ্চ
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ ভালো
৯. মেডিক্যাল চাকরি
বাংলাদেশে মেডিক্যালের চাকরির চাহিদা কখনও কমে না। মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে মেডিক্যাল সেক্টরে বাড়ছে মেডিক্যাল প্রফেশনালদের সংখ্যা। প্রতিদিনই এমন সব নবীন প্রফেশনালদের সংখ্যা বাড়ছে যারা নতুন প্রযুক্তি এবং মেডিক্যাল সম্পর্কে প্রায় সবকিছুর সাথেই পরিচিত। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে চিকিৎসা সেবা মানের স্ট্যান্ডার্ড বদলালেও বাংলাদেশে মৌলিক মেডিক্যাল জ্ঞানসম্পন কর্মীদের অত্যন্ত প্রয়োজন।
বেতনঃ উচ্চ
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ ভালো
১০. ফ্রীল্যান্স চাকরি
ফ্রীল্যান্স জবকে আপাত দৃষ্টিতে পার্টটাইম চাকরি মনে হলেও এই জবের ধরণ ভিন্ন। ফ্রীল্যান্স চাকরি বাংলাদেশে সাধারণত প্রোজেক্ট নির্ভর। ভাল পারফরম্যান্স আর ডেডলাইন মিট করতে পারার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ফ্রীল্যান্সের সাফল্য ফ্রীল্যান্সাররা যদি কিছু নিয়মিত ক্লায়েন্ট হাতে রাখতে পারেন তবে তা লাভজনক। বলতে গেলে হাতে গোনা খুব কম মানুষই ফ্রীল্যান্সার হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হয়েছেন।
বেতনঃ উচ্চ
সুযোগঃ অনেক
ক্যারিয়ার আউটলুকঃ কম
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে ভাল আরোও ভাল করতে সক্ষম হয়েছে যার দরুন বেশ কিছু সেক্টরে চাকরির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে এবং খুলেছে নতুন সম্ভাবনার দরজা। আমরা যেহেতু ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় চাকরিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি, সেহেতু আমরা আশা করবো আপনি এসব চাকরির ব্যাপারে আরও বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেবেন। বাংলাদেশে চাকরি খোঁজার সময় আপনার স্কিল সেট, স্যালারি রেঞ্জ, ক্যারিয়ার আউটলুক এবং আপনার কাজের ভিত্তিতে কোম্পানি কি কি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সেগুলো ভাল করে যাচাই করে নিন। ভবিষ্যতের কঠিন প্রতিযোগিতাময় চাকরির বাজারের সব ধরণের চাকরিতেই কিছু না কিছু প্রযুক্তিগত স্কিলের প্রয়োজন হবে। আপনার সব দক্ষতাগুলো ভালোভাবে জেনে নিন এবং নতুন দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করুন। প্রচুর রিসার্চ করুন এবং পড়ুন।
আপনাদের জন্য শুভ কামনা! কমেন্ট সেকশনে লিখে জানান আপনার মতামত।